মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) একদিনে মৌলভীবাজার জেলার দুইটি সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ৭১ জন বাংলাদেশিকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ভোরে জেলার বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পৃথক এ ঘটনায় অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করেন ৪৮ জন বাংলাদেশি। বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের একটি টহল দল সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় গমনকালে তাদের আটক করে। এদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ,১৫ জন নারী ও ১৮ জন শিশু রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানান,তারা ৬ মাস থেকে ১৭ বছর আগে যশোর ও কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। কেউ গিয়েছিলেন কাজের জন্য,কেউবা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। অনেকেই ভারতে বসবাস করছিলেন অভিবাসী হিসেবে। কিন্তু সম্প্রতি বিএসএফ তাদের বিনা নোটিশে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
৫২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল হক চৌধুরী জানান,“আটক ব্যক্তিদের বাড়ি যশোর, বাগেরহাট, চাপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, বরিশাল এবং কুড়িগ্রাম জেলায়। পরিচয় যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একই দিনে শ্রীমঙ্গল উপজেলার জাম্বুরাছড়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে আরও ২৩ জন। এদের মধ্যে ৯ জন শিশু, ৯ জন নারী এবং ৫ জন পুরুষ। বিজিবি কাকমারা বিওপির আওতায় তাদের আটক করে। শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান,বিজিবি এখনো তাদের থানায় হস্তান্তর করেনি।
এ নিয়ে চলতি বছরে মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি সীমান্ত দিয়ে পুশ-ইনের ঘটনায় বিজিবির হাতে আটক হলেন অন্তত ৪৫০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিক। স্থানীয়দের ভাষ্য,এর বাইরেও আরও অনেকেই অনুপ্রবেশ করলেও প্রশাসনের নজরে পড়েননি।
মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন পর্যবেক্ষকদের মতে, পুশ-ইন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয় শুধু,এটি আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন এবং মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন। কোনো নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আগে তার পরিচয়,নিরাপত্তা, সম্মতি এবং আইনি সহায়তা নিশ্চিত করাই আন্তর্জাতিক প্রথা।
যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে,তাদের অনেকেই ভারতে জন্ম নেওয়া শিশু। তারা নাগরিকত্বহীন, রাষ্ট্রহীন অবস্থায় রয়েছে। তাদের জন্য নেই নির্দিষ্ট পরিচয়,শিক্ষাগত সনদ বা চিকিৎসা অধিকার। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার কী পদক্ষেপ নেবে-তা এখনও অনিশ্চিত।
সীমান্ত এলাকার মানুষ বলছেন,প্রতিদিনই নতুন নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে। নারী ও শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। তারা আশ্রয়ের জন্য ছুটছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে,কেউ কেউ খোলা জায়গায় বসবাস করছে। এতে সামাজিক চাপ বাড়ছে,উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।