মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ):
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের দুর্গম চরের গ্রামগুলোতে খামারিরা হৃষ্টপুষ্ট করেছেন প্রায় ৮ হাজার ষাঁড় গরু। দেশি ও বিদেশি জাতের এই পশুগুলোর সম্ভাব্য বাজারমূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। খামারিরা বলছেন, শুধুমাত্র স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে ঘাস, ছোলা, খৈল, ভুসি, চিটা গুড়সহ দেশীয় পদ্ধতিতে তারা এই পশুগুলো লালন-পালন করেছেন।
শাহজাদপুরের দুর্গম চর বানতিয়া, কুরসী, ধিতপুর, ছোট ও বড় চানতারা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ২ থেকে ৫টি ষাঁড় গরু লালন-পালন করা হয়েছে। কেউ কেউ মাঠের কাঁচা ঘাস আর হাতে বানানো দানাদার খাদ্য খাইয়ে গরুগুলোকে বিক্রির উপযোগী করেছেন।
কুরসী গ্রামের দিনমজুরের স্ত্রী রহিমা খাতুন বলেন,
“আমার থাকার জন্য একটা টিনের ছাপড়া ঘর। ওখানেই ৪টা সন্তান নিয়ে কোনোরকমে থাকি। এবার দুইটা ষাঁড় গরু বড় করছি। আল্লাহ চাইলে বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা পেতে পারি। একটা গরুর টাকায় আবার দুটো বাছুর কিনব, আরেকটার টাকায় একটা ঘর বানাব।”
শুধু রহিমা নন, তার মতো আরও অনেক নারী ও প্রান্তিক খামারি এই কোরবানির মৌসুমে গরু বিক্রির অর্থ দিয়ে ঘর নির্মাণ, সন্তানদের পড়ালেখা বা ভবিষ্যতের জন্য বাছুর কিনে আবার খামার গড়ার স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বিল্লাল হোসেন জানান,
“এই বছর সোনাতনী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে খামারিরা প্রায় ৭ হাজার ৭০০টি ষাঁড় হৃষ্টপুষ্ট করেছেন, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১৫০ কোটি টাকা। প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে খামারিদের প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে আমরা তাদের উৎসাহিত করেছি।”
এসব গরু শুধু স্থানীয় হাটেই নয়, বরং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারিরা।
এক সময়ের অবহেলিত চরাঞ্চল এখন হয়ে উঠেছে সম্ভাবনার ক্ষেত্র। কোরবানির মৌসুমে এই চরাঞ্চলের গরু বিক্রি থেকেই উঠে আসছে শত শত পরিবারে হাসি আর স্বপ্ন পূরণের গল্প।