(জয়পুরহাট) জেলা প্রতিনিধি:
চার বছরের প্রেমের টান, অবশেষে বিয়ের উদ্দেশ্যে তরুণীর বাড়িতে পা রাখা—কিন্তু প্রেমিকের কপালে জুটলো অপমান, আটকে রাখা, আর শেষমেশ পুলিশের হেফাজতে মুক্তি। জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে এমনই এক নাটকীয় ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম দিয়েছেন নওগাঁর সান্তাহার উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক ইউসুফ আলী (৫০)।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার ঘোরশাল গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে৷ ইউসুফ আলী দীর্ঘদিন ধরে ক্ষেতলাল উপজেলার সমন্তাহার গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলেন। প্রেমের গভীরতা এতটাই বেড়ে যায় যে, গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে তিনি এক কিশোরী সঙ্গীকে নিয়ে সরাসরি তরুণীর বাড়িতে হাজির হন—বিয়ের উদ্দেশ্যে।
কিন্তু ভালোবাসার পরিণতি সুখকর হয়নি ইউসুফের জন্য। তরুণী নিজে ও তার প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় প্রেমিক ইউসুফকে তার বাড়িতে আটকে রাখেন। স্থানীয়দের মধ্যে এ খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ ভিড় জমায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন, তবে কোনো সমাধান মেলেনি।
সন্ধ্যার পর উত্তেজিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশে ফোন করা হয়। কিন্তু রাত ১০টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল না দিয়ে ফিরে যায়। পরদিন ফের মীমাংসার চেষ্টা চলে। এক পর্যায়ে ইউসুফের পক্ষ থেকে তরুণীর পরিবারকে ১১ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তরুণী স্পষ্ট জানিয়ে দেন—“বিয়ে ছাড়া কোনো আপোষ নয়।”
এদিকে, ঘটনাটি ঘুরে যায় অন্যদিকে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ‘মোড়ল’রা আবারও পুলিশের দ্বারস্থ হন। বুধবার রাত ১০টার দিকে পুলিশ ইউসুফ ও তার কিশোরী সঙ্গীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। অভিযোগ না থাকায় তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
“পুলিশই ইউসুফকে নিয়ে গেছে”তরুণীর বিস্ফোরক অভিযোগ৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বার্তায় তরুণী বলেন, “ইউসুফ আমাকে বিয়ে করতে এসেছে। দেনমোহরের আলোচনা চলছিল। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এসে অশান্তি সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে ১১ লক্ষ টাকা ইউসুবের পরিবার আমার গ্রামের ভাই প্লাবনের মাধ্যমে তার বাড়িতে রাখা হয়। কিন্তু পুলিশ এসে ইউসুফকে তুলে নিয়ে যায়৷ আমাকে নেয়নি। পুলিশের ভূমিকা দেখে আমি স্তম্ভিত। যারা এই ঘটনায় জড়িত, আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।”
ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন মণ্ডল। তিনি জানান, “দুইদিন ধরেই দেন-দরবার চলছিল। কোনো সমাধান না হওয়ায় পুলিশ ইউসুফকে থানায় নিয়ে গেছে।”
থানার বক্তব্য: ক্ষেতলাল থানার ওসি (তদন্ত) দীপেন্দ্রনাথ সিং জানান, “অভিযোগের ভিত্তিতে ইউসুফ আলীকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। যেহেতু কোনো লিখিত অভিযোগ ছিল না, তাই মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই তরুণীর অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”