সাজেদুল ইসলাম,ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি :
একসময় বুকভরা আশা আর চোখভরা স্বপ্ন নিয়ে নতুন জীবনের পথচলা শুরু করেছিল শত পরিবার। মাথার ওপর ছাদ, পায়ের নিচে জমি—ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ও মানবিক জীবনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০০১ সালে টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল গাবসারায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু, কালের পরিক্রমায় সেই আশ্রয়ণ এখন পরিণত হয়েছে হতাশার এক ধ্বংসস্তূপে।
প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা সরেজমিনে দেখে চরম ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠেছে। ঘরগুলোর দেয়াল ও টিনে দৃশ্যমান ক্ষয়-ক্ষতি এবং অনেক জায়গায় ভাঙচুরের চিহ্ন স্পষ্ট। দীর্ঘদিন অযত্ন-অবহেলায় প্রকল্পের পরিবেশ হয়ে উঠেছে অস্বাস্থ্যকর, অপরিচ্ছন্ন এবং দুর্গন্ধযুক্ত। বেশ কিছু ঘরের নিচের পিলারেও দেখা গেছে ফাটল ও ক্ষয়ের চিহ্ন, যার ফলে সামান্য ভূমিকম্প বা ঝড় এলেই পুরো কাঠামো ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বহু ঘরের নিচে জমে থাকা গোবর ও পশুখাদ্য এখন প্রাণীদের খোয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, আর আশপাশের জঙ্গল ও আগাছায় ঢাকা পড়েছে প্রকল্পটি।
জানা যায়, প্রকল্পটি প্রায় ৫০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছিল এবং সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল ভূমিহীন ও অসহায় ১০০টি পরিবার। কিন্তু ২৫ বছরের মধ্যে সেই স্বপ্ন এখন এক নীরব সংকটে পরিণত হয়েছে—অস্তিত্বের সংকটে পড়ে বর্তমানে মাত্র ১২টি পরিবার এখানে বসবাস করছে। বাকি পরিবারগুলো বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশের কারণে অন্যত্র চলে গেছে।
প্রথমদিকে টিনের দোচালা ঘর এবং জমির মালিকানা পেয়ে অনেকেই আনন্দে আত্মহারা ছিলেন, তাদের চোখে ছিল নিরাপত্তার আলো এবং স্থায়ী পুনর্বাসনের স্বপ্ন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রকল্পটি হারিয়েছে তার গৌরব। বর্তমানে বৃষ্টিতে টিনের ঘর ভিজে যায় এবং সেটা ঠেকাতে পলিথিনই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টয়লেট, গোসলখানা বা সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে । অধিকাংশ টিউবওয়েল অকেজো, আর অনেক ঘরই ভেঙে পড়েছে।
এদিকে, আশ্রয়ণের সাবেক বাসিন্দা ওয়েদ এবং নাসির বলেন, “নামে আশ্রয়ণ, কিন্তু এখানে মানুষ থাকার মতো কোন পরিবেশ নেই। বাধ্য হয়ে চলে গেছি।” এছাড়াও, বর্তমান বাসিন্দা মোমেনা বেগম, আমবিয়া বেগম, সুখিতন বেগম এবং সুরত আলীরা জানান, “প্রতিবার অভিযোগ করলেও কেউ কোনো কাজ নেয়নি। দুর্ভোগ আমাদের নিত্যসঙ্গী। বৃষ্টি, সাপ, পোকামাকড় বা চোর ঢুকে পড়তে পারে—এই আতঙ্কে দিন কাটে আমাদের । কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাই এখানেই থাকতে হচ্ছে আমাদের ।”
স্থানীয়দের মতে, অনেকবার উন্নয়ন বরাদ্দ এলেও দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে কোনো প্রকল্পই বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে ঘরের সংস্কার বা টেকসই উন্নয়নের সুযোগ বারবার হারিয়ে গেছে।
গাবসারা ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ আলাম আকন্দ শাপলা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি আমাদের চরাঞ্চলের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাই যেন এটি দ্রুত সংস্কার করা হয়। এতে করে স্থানীয়রা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, প্রকল্পটির দুরবস্থার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রবণতা
- জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বানারীপাড়ায় জামায়াতের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
- ক্ষমতা পাওয়ার আগেই একটি দল চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ শুরু করেছে : শিবির
- চাঁদাবাজি নয়, ভাঙারি দোকান দখল দ্বন্দ্বেই মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড: ডিএমপি
- মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা :‘মনে হচ্ছে আমরা যেন নরকে বাস করছি’
- শ্রীবরদীতে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠালো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
- আলোকবর্তিকা রাজীব কুমার সরকার: লক্ষ্মীপুরে মানবিক প্রশাসনের অনন্য দৃষ্টান্ত
- মোবাইল আসক্তি নিয়ে অভিমান, বোয়ালমারীতে যুবকের আত্মহত্যা