মো. জাহিদুল ইসলাম, বরিশাল প্রতিনিধি:
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেইন্ট বাংলাদেশ।
২০১৯ সাল থেকে সেইভ দ্য চিলড্রেনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় শিশুদের জন্য পরিচালিত কর্মসূচির আওতায় উপজেলার প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, অভিভাবক সমাবেশ এবং বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে আলোচনা সভা আয়োজন করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সেইন্ট বাংলাদেশ, বাকেরগঞ্জ শাখার প্রকল্প সমন্বয়ক ইশতিয়াক আলম জানান, “এখন পর্যন্ত বাকেরগঞ্জের ৩৮টি বিদ্যালয়কে ‘বাল্যবিয়ে মুক্ত বিদ্যালয়’ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০২৩ সালে ১৪টি, ২০২৪ সালে ১৪টি এবং চলতি ২০২৫ সালে ১০টি বিদ্যালয় এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। আমরা উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়কে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।”
কেবল বিদ্যালয় নয়, দরকার সামগ্রিক সামাজিক উদ্যোগ
তবে শুধু বিদ্যালয়কে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না বলে মত দিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। কারণ বিয়ের পর অধিকাংশ মেয়ের পড়াশোনা থেমে যায়। পাশাপাশি অনেক সময় জন্মসনদে বয়স বাড়িয়ে, ভুয়া তথ্য দিয়ে বিবাহের আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
একজন অভিভাবক বলেন, “বর্তমানে ইভটিজিং, কিশোর অপরাধ, ও রাস্তাঘাটে নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমাদের বাধ্য হয়ে মেয়েদের কম বয়সেই বিয়ে দিতে হচ্ছে।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অনেক কাজী ও মৌলভী অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে পড়িয়ে থাকেন, যারা জন্মসনদের সত্যতা যাচাই না করেই কাবিন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। এতে করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে।
সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কাগজে-কলমে বিদ্যালয়কে ‘বাল্যবিয়ে মুক্ত’ ঘোষণা করলেই বাস্তবে তা কার্যকর হবে না। এজন্য প্রয়োজন—
- সমাজে মেয়েদের নিরাপদ চলাচলের নিশ্চয়তা
- ইভটিজিং ও কিশোর অপরাধ নির্মূলে কার্যকর উদ্যোগ
- সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ
- কাজী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমন্বিত ভূমিকা
যখন একজন অভিভাবক নিশ্চিত হবেন তার কন্যাশিশু নিরাপদে স্কুল-কলেজে যেতে পারছে, তখনই তারা মেয়ের বিয়ের বিষয়ে বয়স অনুযায়ী বিবেচনা করবেন। আর তখনই সমাজ প্রকৃত অর্থে বাল্যবিয়ে মুক্ত হবে।