সাইফুল ইসলাম, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর বাউফলের কালিশুরী ইউনিয়নের পোনাহুড়া ফাজিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগে ঘুষ লেনদেন ও নিয়োগে অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে জানা যায়, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মেধাক্রমে প্রথম স্থান অর্জনকারী প্রার্থীকে বাদ দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালে মাদ্রাসাটিতে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, লিখিত পরীক্ষার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ১০টা, তবে গোপনে সময় পরিবর্তন করে পরীক্ষা নেওয়া হয় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন বাদ পড়া প্রার্থী পূর্ব চাঁদকাঠী ডি.এস. দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. জাকির হোসাইন।
২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দেন। অভিযোগে বলা হয়, কালিশুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি নেছার উদ্দিন সিকদার জামালের হস্তক্ষেপে বিশ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে মো. শাহাবুদ্দিন আল মামুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজীর কাছেও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়, তবে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
পরে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে ১৭ মে ২০২৫ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া, মাদ্রাসাটিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত যোগ্যতা ও জমি সংক্রান্ত বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও ফাজিল মাদ্রাসা থেকে কামিল মাদ্রাসায় উন্নীত করার প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক আপত্তি উঠেছে।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি তিন সদস্যের তদন্ত প্রতিনিধি দল মাদ্রাসাটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন—কুষ্টিয়া ক্যাম্পাসের অধ্যাপক ড. একে এম শামসুল হক সিদ্দিকী, ঢাকা অফিসের সহকারী পরিচালক (বাজেট) মো. হারুন অর রশিদ এবং সহকারী মাদ্রাসা পরিদর্শক মো. শরিফুল ইসলাম।
তদন্ত দল সাংবাদিকদের বলেন,
“আমরা অভিযোগ–সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করেছি। যাচাই–বাছাই শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা সমীচীন নয়।”
এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ উঠানো মো. শাহাবুদ্দিন আল মামুনকে বরখাস্ত করে প্রথম স্থান অধিকারী মো. জাকির হোসাইনকে নিয়োগ এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।