শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে অপারেশনের পর দুই সন্তানের জননী এক গর্ভবতী নারীর মৃত্যু ও পরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে পরিবারের সঙ্গে ‘রফাদফা’র ঘটনায় শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিবাগত রাতে শহরের শহীদ তুলশীরাম সড়কে অবস্থিত গ্রীন লাইফ ল্যাব অ্যান্ড হসপিটালে এই ঘটনা ঘটে। মৃত্যুবরণকারী সোগরা বেগম (২৮) সৈয়দপুর পৌরসভার ১৪ নং ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ী আমিন মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. আরিফ হোসেনের স্ত্রী।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোগরা বেগম ৪৫ দিনের গর্ভবতী ছিলেন। প্রস্রাবে সংক্রমণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ৮টার দিকে তাঁকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গাইনী চিকিৎসক ডা. ওয়াজেরা সিফাত জাহান শান্ত দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দিলে রাত ১১টার দিকে অপারেশন সম্পন্ন হয়।
তবে রাত ৩টার দিকে সোগরার মৃত্যু ঘটে। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ দ্রুত সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চালায় এবং নিজেদের অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুরে নেয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু রোগীর স্বজনদের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তাঁকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, রোগী অনেক আগেই মারা গেছেন।
এতে রোগীর স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কৌশলে সাড়ে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। স্বজনরা শেষপর্যন্ত লাশ বাড়িতে নিয়ে যায়। যদিও ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
রোগীর স্বামী আরিফ হোসেন জানান, “যে চলে গেছে, তাকে তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। তারা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে, সেটা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগবে। তাতেই ওর আত্মা শান্তি পাবে।”
ঘটনার পর থেকে অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. ওয়াজেরা সিফাত জাহান (শান্ত) পলাতক। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তার কোন খোঁজ দিতে পারেনি। এমনকি সংবাদকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগেও অসহযোগিতা করেছে।
হাসপাতালের ম্যানেজার শাহিনুর ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি শুধু বলেন, “আমাদের এমডি নাজমুল হুদা জুয়েল নওগাঁয় আছেন। তিনি এলেই বিস্তারিত জানা যাবে।”
পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হুদা জুয়েলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমরা অপারেশন না করলেও হয়তো সে মারা যেত। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি। মারা যাওয়ার পর ক্ষতিপূরণ দিয়েছি, এখন আর কোনো অভিযোগ থাকার কথা নয়।”
তবে তিনি এই বিষয়ে পরদিন ‘চা-চক্রে’ বসে কথা বলার প্রস্তাব দেন সাংবাদিকদের।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৈয়দপুর শহরে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে—একটি রোগীর মৃত্যুর দায়ভার কি মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকায় শেষ হয়ে যায়? চিকিৎসকের পলায়ন এবং হাসপাতালের অসহযোগিতা কি গাফিলতি ও দায় এড়ানোর চেষ্টার ইঙ্গিত দিচ্ছে?
এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, তা এখনো জানা যায়নি।