শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী সংবাদদাতা:
নোয়াখালীতে কিশোর গ্যাংয়ের অপহরণ কান্ডে বাধা দেওয়ায় নিরপরাধ যুবদল কর্মী ইয়াছিন আরাফাত শাকিলকে (২৮) প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নোয়াখালী বেগমগঞ্জের ছয়ানীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের গঙ্গাবর ইসলামিয়া মার্কেটে এলাকাবাসীরা ঘন্টা ব্যাপী বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এতে বক্তব্য রাখেন ছয়ানী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক নিজামুদ্দিন চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরনবী চৌধুরী, সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন সোহেল, ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাহের আহমদ, মাওলানা ওসমান গনি, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মোহাম্মদ মাসুদ, ইউনিয়ন বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম, আব্দুর রহমান, নোমান রাজু, খালিদ হাসান রাজু।
বক্তারা, যুবদল কর্মী নিরপরাধ শাকিল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে সকল সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করারও দাবি জানান। এ কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিগত সময়ে লালন পালন করেছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সকল সন্ত্রাসীদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের সকলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানানো হয়।
বেগমগঞ্জ থানার পরিদর্শক তদন্ত মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান এই ঘটনায় নিহতের বাবা সোলাইমান খোকন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার এজহারে তিনজনের নাম উল্লেখ করে আরো ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামের খোকনের ছেলে মোরশেদ আলম (২৫), একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে মো.জীবন (২৪) ও মো. মনির (২২)।
তিনি আরও জানান মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের যৌথ টিম গঙ্গাবর বাজারের পাশে একটি পরিত্যক্ত ডোবার পাশের ঝোপ থেকে একটি অটোমেটিক পিস্তল এবং পিস্তলের সাথে থাকা একটি খালি ম্যাগজিন উদ্ধার করে। এর আগে ঘটনার পরপরই সোমবার রাতে সেনাবাহিনী পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের যৌথ টিম ঘটনাস্থল থেকে এক রাউন্ড গুলি ও এক রাউন্ড গুলির খোসা ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাকিলসহ কয়েকজন ছয়ানীর গঙ্গাবর বাজারের ইসলামীয়া মার্কেটের একটি দোকানে চা খাচ্ছিলেন। ওই সময় এলাকায় একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে কিশোর গ্যাংয়ের ৭/৮ জন অস্ত্রধারীরা এসে লাবিব নামে এক তরুণকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় শাকিলসহ আরো কয়েকজন তাদের বাঁধা দেয়। এ সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শাকিলকে এলোপাতারি গুলি করে। একই সময় শাকিলের ছোট ভাই শুভ (২৫) বাধা দিতে গেলে তাকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তাৎক্ষণিক এলাকার লোকজন দুই ভাইকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাকিলকে মৃত ঘোষণা করেন। শুভ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাদিন রয়েছে। এদিকে স্থানীয় লোকজন অস্ত্রধারী তিন সন্ত্রাসীকে গণধোলাই দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে পুলিশ সেনাবাহিনী ডিবিসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।