দেশের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতা মঞ্চ এক মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করেছে। একইসঙ্গে বন্দরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে দুবাইভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড-এর সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) হস্তান্তরের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই হস্তান্তর কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং কৌশলগত দিক থেকেও দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
বক্তারা জানান, ডিপি ওয়ার্ল্ড যুক্তরাষ্ট্রের ‘Customs-Trade Partnership Against Terrorism (C‑TPAT)’-এর অনুমোদিত এবং মার্কিন নৌবাহিনীর ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বন্দরে সামরিক জাহাজে সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া, ইসরায়েলি শিপিং কোম্পানি ‘জিম ইন্টিগ্রেটেড শিপিং সার্ভিসেস’-এর সঙ্গেও তাদের দৃঢ় ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।
ছাত্র জনতা মঞ্চের আহ্বায়ক জাকি সুমন বলেন, “এই সিদ্ধান্ত শুধু দেশের অর্থনীতির জন্য নয়, বঙ্গোপসাগরে মার্কিন প্রভাব প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও এক বড় হুমকি।”
সংগঠনটির সদস্য সচিব ডিকে সোলায়মান মানববন্ধনে পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন:
১. চট্টগ্রাম বন্দরের হস্তান্তর প্রক্রিয়া অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে।
২. বিষয়টি জাতীয় সংসদে আলোচনা ও গণশুনানির মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে।
৩. বন্দর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে।
৫. যেকোনো কৌশলগত চুক্তির আগে জাতির স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
নিপীড়ন বিরোধী জুলাই মঞ্চ-এর সদস্য সচিব মুত্তাকিন মুন বলেন, “বিএসসির সাবেক এমডি কমোডর এসএম মনিরুজ্জামান এবং সাবেক মন্ত্রী সালমান এফ রহমানের যোগসাজশে ছয়টি বাজেটে চারটি জাহাজ কিনে বিএসসির প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান বন্দর চেয়ারম্যান সেই চক্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন।
এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, ডিপি ওয়ার্ল্ড চট্টগ্রাম বন্দরে ৩১ জনের প্রবেশ অনুমতির আবেদন করেছে, যাদের মধ্যে ১৯ জন ভারতীয়, আর মাত্র একজন বাংলাদেশি। এটি ভবিষ্যতে ভারত-আমেরিকার যৌথ সামরিক তৎপরতার আশঙ্কা তৈরি করছে বলে বক্তারা দাবি করেন।
সংগঠনের নেতারা বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে আন্তর্জাতিক শক্তির সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের যে কৌশল চলছে, তা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ভয়াবহ হুমকি।”
মানববন্ধন থেকে দেশপ্রেমিক নাগরিক, শ্রমজীবী মানুষ, মিডিয়া ও সুশীল সমাজকে এই “বন্দর বেচাকেনা চক্রান্ত” প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।