বরিশাল প্রতিনিধি:
বরিশালের বাকেরগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী গ্রাহক। মামলায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সাবেক ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) গোবিন্দ চন্দ্র দাস এবং ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন ও মেজবা উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী লোকমান সিকদার উপজেলার বোয়ালিয়া বাজারের ‘দেশ টেলিকম’ নামে একটি বিকাশ এজেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নিজস্ব ভবনে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বুথে জমা দিতেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ টাকা জমা দেন তিনি, প্রতিবারেই ব্যাংকের রশিদ গ্রহণ করেন।
তবে চলতি বছরের শুরুতে একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেন, বিল পরিশোধের পরও নতুন করে বকেয়া আসছে কেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে লোকমান আবিষ্কার করেন, ব্যাংকে জমা দেওয়া টাকার মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ টাকা অনুপস্থিত। এরপর থেকে শুরু হয় হয়রানি।
লোকমানের দাবি, অভিযুক্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন একপর্যায়ে গোপনে চট্টগ্রামে বদলি হয়ে যান। তিনি বিষয়টি তৎকালীন ডিজিএম গোবিন্দ চন্দ্র দাসকে জানালে, তিনি দায় ঝেড়ে দিয়ে ব্যাংকে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপরও কোনো সমাধান না পেয়ে বাধ্য হয়ে লোকমান জমি বিক্রি করে প্রায় ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।
অবশেষে গত ২১ মে বরিশালের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। মামলা নম্বর: ২০২৫/বাকেরগঞ্জ।
ভুয়া বুথ, প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগ
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বুথটি বিদ্যুৎ অফিস ভবনে স্থাপন করা হলেও এতে কোনো বৈধ সাইনবোর্ড বা স্পষ্ট পরিচয় ছিল না। কেবল “বিদ্যুৎ বিল কালেকশন বুথ” লেখা থাকায় অধিকাংশ গ্রাহক এটিকে বিদ্যুৎ অফিসের অংশ মনে করতেন।
অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন চার মাসের বিল নিয়ে গ্রাহকদের রশিদে “Paid” লিখে দিতেন, কিন্তু আসলে অর্ধেক টাকাও জমা দিতেন না। বাকি অর্থ আত্মসাৎ করতেন তিনি।
বিদ্যুৎ অফিসে দুর্ব্যবহার ও শারীরিক লাঞ্ছনার অভিযোগ
ভুক্তভোগীদের দাবি, অভিযোগ জানাতে গেলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কিছু মহিলা কর্মকর্তা দুর্ব্যবহার করেন, এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার অভিযোগও রয়েছে। এক প্রতিবন্ধীকে মারধর করে দাঁত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাব-স্টেশনের কর্মীদের বিরুদ্ধে।
প্রতারণার শিকার লোকমানের আত্মহত্যার হুমকি
লোকমান বলেন, “অফিসের চাপেই জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেছি। এখনো কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে, তাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু ডিজিএম স্যার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনো অনুরোধ রাখতে পারবেন না। যদি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, তাহলে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”
বর্তমান ডিজিএম বলেন, “আমি নতুন এসেছি, এসব বিষয়ে অবগত নই।” তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
লোকমান সিকদার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।