আবু হাসনাত তুহিন,পবিপ্রবি প্রতিনিধি:
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ভাষা ও যোগাযোগ বিভাগের প্রখ্যাত অধ্যাপক, রিজেন্ট বোর্ডের সম্মানিত সদস্য, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা এবং নিবেদিত গবেষক ড. মোঃ জিল্লুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মঙ্গলবার (৩ জুন) ভোর ৫টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যান্সার ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন।
অধ্যাপক জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে পবিপ্রবি পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই বিদায় কেবল একজন শিক্ষক বা গবেষকের নয়—একজন অভিভাবকসুলভ, মমতাময়, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন আলোকিত মানুষের।
সংক্ষিপ্ত জীবন ও শিক্ষাজীবন:
১৯৭৭ সালের ১৯ জুন ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার ভায়না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. জিল্লুর রহমান। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (সম্মান) ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৯ সালে “Shakespearean Tragedies and Social Realism” শীর্ষক গবেষণায় এমফিল এবং ২০২২ সালে “The Second Generation English Romantic Poets and Kazi Nazrul Islam: A Comparative Study” শীর্ষক গবেষণায় পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন ও অবদান:
২০০৭ সালে পবিপ্রবিতে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের পর তিনি সহকারী, সহযোগী এবং শেষতক অধ্যাপক পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভাষা ও যোগাযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা, রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য এবং বাংলাদেশ স্কাউটস পটুয়াখালী জেলার রোভার স্কাউটের সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে।
গবেষণা ও প্রকাশনা:
শেক্সপিয়র, রোমান্টিক কবিতা, ইকো-পোয়েট্রি, মানবাধিকার ও সাহিত্য, নজরুল গবেষণা ও ইংরেজি শিক্ষায় নতুন পদ্ধতি—এই সবখানেই তাঁর গবেষণার স্বাক্ষর রয়েছে। দেশি-বিদেশি জার্নালে তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা ২০টির অধিক। তিনি দুইটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন:
- English for Specific Purposes at PSTU: Fluxes, Challenges & Prospects (2022–2023)
- Expediting Students’ English Writing Skill through Performance Assessment (2024–2025)
ব্যক্তিত্ব ও জীবনদর্শন:
ড. জিল্লুর রহমান ছিলেন বিনয়ী, সহিষ্ণু, সদালাপী এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন একজন মানুষ। দীর্ঘ অসুস্থতার মধ্যেও তিনি ছিলেন অদম্য, ঈমানদীপ্ত ও ধৈর্যশীল। মৃত্যুর আগে তাঁর ঠোঁট থেকে উচ্চারিত হয়—“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”—যা তাঁর বিশ্বাস ও আত্মপ্রস্তুতির গভীর প্রতিফলন।
তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক পুত্র ও প্রথম শ্রেণির এক কন্যাকে। তাঁর পিতার নাম মোঃ শামসুল হক এবং মাতার নাম বিলকিস বেগম।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শোকবার্তা:
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন—
“প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান ছিলেন একজন প্রকৃত জ্ঞানসাধক ও শিক্ষার্থীপ্রিয় শিক্ষক। তাঁর মৃত্যু আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান বলেন—
“তিনি ছিলেন নিরহংকার, সদালাপী এবং অসামান্য মননের মানুষ। তাঁর প্রতিটি ক্লাস শিক্ষার্থীদের জীবনে ছিল আশার আলো।”
কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবদুল লতিফ বলেন—
“তাঁর শিক্ষকতা ও গবেষণায় নিষ্ঠা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আমরা একজন আদর্শ সহকর্মীকে হারালাম।”
রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন—
“তিনি ছিলেন আমাদের জন্য এক প্রজ্ঞাদীপ্ত বাতিঘর। তাঁর হাসিমাখা মুখ, কোমল ব্যবহার ও প্রজ্ঞাপূর্ণ কথাবার্তা চিরকাল হৃদয়ে গেঁথে থাকবে।”
শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি:
জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ ও পবিপ্রবি পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান স্যারের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। মহান আল্লাহ্ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই শোক সইবার শক্তি দান করেন।
🕊️ বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
আমরা তাঁকে স্মরণ করবো জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হিসেবে।