কিবরিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে চলন্ত বাসে এক কলেজছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (১৫ জুন) রাতে নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কের আউশকান্দি এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর বাসচালককে আটক করা হলেও হেলপার এখনো পলাতক রয়েছে।
পুলিশ জানায়, ওই ছাত্রী ঢাকার ফার্মগেটের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ঈদের পর বাড়ি ফেরার পথে এ নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
ঘটনার বিবরণ:
রবিবার সকাল ১১টায় ভুক্তভোগী ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বানিয়াচং উপজেলার উদ্দেশে রওনা দেন। শায়েস্তাগঞ্জে নামার কথা থাকলেও বাসে ঘুমিয়ে পড়ায় তাকে শেরপুরে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টায় ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামক একটি লোকাল বাসে (নম্বর: সিলেট-জ-১১-০৩৬৬) করে আউশকান্দির দিকে রওনা দেন তিনি।
প্রথম দিকে বাসে যাত্রী থাকলেও আউশকান্দি এলাকায় পৌঁছানোর পর সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ফাঁকা বাসে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে বাসের চালক মো. সাব্বির (২৫) এবং হেলপার লিটন (২৩)।
চিৎকার শুনে স্থানীয়রা বাস থামিয়ে চালক সাব্বিরকে আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন। তবে হেলপার লিটন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ:
চিৎকার ও বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল নবীগঞ্জ পৌর এলাকার তিনতালাব পুকুরপাড় এলাকায় পৌঁছে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় সেনাসদস্যরা বাস থামিয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার এবং চালককে আটক করে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেন।
আইনি পদক্ষেপ ও তদন্ত:
নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মো. কামরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,
“ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণ মামলা রুজু করা হয়েছে। বাসচালক সাব্বিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পলাতক হেলপার লিটনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
পুলিশ সুপারের পরিদর্শন:
সোমবার (১৬ জুন) বেলা ১২টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ এন এম সাজেদুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,
“অপরাধীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।”
ভুক্তভোগীর বক্তব্য:
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন,
“আমি ঢাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি গার্মেন্টসে কাজ করি। ঈদের সময় ঢাকায় ছিলাম। ঈদের পর গ্রামের বাড়ি ফিরছিলাম। আমার জীবনে এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি। আমি ন্যায়বিচার চাই।”
প্রসঙ্গত:
এই নির্মম ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।