শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
সারাদেশে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, জুয়া, মাদক কারবারি ও যুবদল নেতা কর্তৃক পুরান ঢাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলটি সন্ধ্যা ৭ টায় শহরের সিএসডি মোড় থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং পুলিশ বক্সের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সৈয়দপুরের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মিছিল ও সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা ‘লন্ডন না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা, কণ্ঠে আবার লাগা জোর, চাঁদাবাজের কবর খোঁড়, ‘চাঁদাবাজ চাঁদা তোলে, ইন্টেরিম কি করে?’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কে দিলোরে জানোয়ার, মানুষ মারার অধিকার’ ‘আমার ভাই কবরে খুনি কেনো বাহিরে’, ‘সন্ত্রাসীরা উল্লাস করে ইন্টেরিম কী করে’, ‘জ্বালোরে জ্বালো আগুন জ্বালো’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘চাঁদাবাজের আস্তানা ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও’ ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, টাকা যায় লন্ডনে’, ‘চাঁদা লাগলে চাঁদা নে, আমার ভাইকে ফেরত দে,’ ‘আমার ভাই মরলো কেন, তারেক রহমান জবাব চাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সমাবেশে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। এ সময় বক্তারা বলেন, দিনদুপুরে ঢাকার ব্যস্ততম এলাকায় একজন ব্যবসায়ীকে যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে দেয়। আমরা অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িত সব খুনিকে গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।
বক্তারা আরো বলেন ,মিটফোর্ডের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার দৃশ্য দেখে আমরা আসলে মর্মাহত, লজ্জিত এবং শঙ্কিতও বটে। আমরা বারবার বলে এসেছি, বাংলাদেশে যে কোনো ব্যক্তি যদি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, সে যদি দলের হয়, তাহলে সে দলীয় সন্ত্রাসী, সে যদি কোনো ব্যক্তিগত অন্যায় করে তাহলে ব্যক্তিগত অন্যায়।
এদিকে বিকেলে জলঢাকা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জলঢাকা জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়। আব্দুল হাকিম সাবু, আহসান হাবিব, আব্দুল্লাহ আল নোমান ও মোহাইমিনুর রহমান সানার নেতৃত্বে সাধারণ ছাত্র-জনতার উদ্যোগে এই প্রতিবাদী কর্মসূচি পালিত হয়।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, “সম্প্রতি দেশের একাধিক এলাকায় একের পর এক বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটছে। অথচ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমরা এই নীরবতার প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নেমেছি।” জিরো পয়েন্টে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, “আমরা আর নিরব থাকবো না। সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এসব অপরাধীর দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সন্ত্রাস ও অনাচারের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।”
এ সময় বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই দেশ আমাদের। এখানে যদি খুন, ধর্ষণ আর সন্ত্রাস বেড়েই চলে, তাহলে আমরা কোথায় নিরাপদ? তাই এই প্রতিবাদ।” বিক্ষোভ শেষে আয়োজকেরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিডফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন এলাকায় দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে পাকা রাস্তার ওপর সোহাগকে পাথর দিয়ে আঘাত করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।