মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার (১৪ মে ২০২৫) দুপুরে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে স্বীকৃত (কার্ডধারী) ৭৫ জন মৎস্যজীবীর মাঝে বিতরণ করা হয় ৭৫টি বকনা বাছুর। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী।
তালিকা গোপন, বরাদ্দে অনিয়ম:
বাছুর বিতরণের তালিকা চাওয়া হলেও মৎস্য অফিসার তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, তালিকা ফরিদপুরে পাঠানো হয়েছে, কম্পিউটারেও নেই। পরবর্তীতে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। তালিকাভুক্ত অনেকেই বাছুর পাননি বলে অভিযোগ করেন, আবার কেউ কেউ টাকা দিয়ে বরাদ্দ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ঘুষের অভিযোগ:
সাতৈর ইউনিয়নের মজুরদিয়া ঘাটের মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, তালিকায় থাকা তাদের ২০ জন সদস্যের মধ্যে বাছুর পেয়েছেন মাত্র ৯ জন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজেই বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বরাদ্দ দিয়েছেন। রবীন্দ্র মালোর স্ত্রী অঞ্জনা মালো অভিযোগ করেছেন, তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন নাজিম।
ময়না ইউনিয়নের বান্দুকগ্রামের নির্মল মালোর বিরুদ্ধেও অনুরূপ অভিযোগ উঠেছে। উপেন মালো ও আনন্দ মালো জানান, তারা নির্মলকে ১৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। কিন্তু উপেনকে বাছুর না দিয়ে কাশিয়ানীর চায়না নামের এক মহিলার কাছে ১৬ হাজার টাকায় গরু দেওয়া হয়েছে। মলিনা রাণী নামে একজন বলেন, তিনি ৩২ হাজার টাকা দিয়ে ২টি বাছুর নিয়েছেন, অথচ তিনি কার্ডধারী নন।
রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষোভ:
বাছুর বিতরণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। স্থানীয় জামায়াতের আমীর মাওলানা সৈয়দ নিয়ামুল হাসান বলেন, “এমন বড় একটি কর্মসূচিতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরই ডাকা হয়নি, তালিকাও জানানো হয়নি।”
বোয়ালমারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার সাহা ও মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক বিশ্বনাথ সরকার জানান, তাদের সংগঠনের অনেক কার্ডধারী সদস্যকে বাদ দিয়ে গোপনে তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
প্রশাসনের অবস্থান:
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “বাছুর বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি, তালিকা অনেক আগে করা হয়েছিল। বিতরণের সময় কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল, পরে তা ঠিক করা হয়েছে।”
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, “বাছুর বিতরণের সময় তালিকায় ১০টি নামে অনিয়ম ধরা পড়ে, তাই তাদের বাদ দিয়ে প্রকৃত উপকারভোগীদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়।”
উপসংহার:
স্থানীয়দের মতে, সরকারি প্রকল্পের এই অনিয়মের যথাযথ তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতেও এই ধরনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটতে থাকবে।