শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুর থানা পুলিশ দুই সন্তানের জনক এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে। রোববার (২৭ এপ্রি) সকাল ৯ টায় শহরের সাহেবপাড়া আমিন মোড় ক্যান্টিন রোড লিচু বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও পূর্বের কলহের সূত্র ধরে এবং লাশের ঝুলন্ত অবস্থার একটি ছবি ঘিরে মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। একারণে লাশের পোস্ট মর্টেম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।
নিহত ব্যাক্তির নাম মাহমুদ (৪৫)। সে সৈয়দপুর শহরের পুরাতন বাবুপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল্লাহর ছেলে। পেশায় একজন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। সাহেবপাড়ায় তিনি শ্ব শুড়বাড়ি সংলগ্ন রেলওয়ে এল-২৫ নং বাংলোর ভিতরে টিনসেট বাড়িতে বসবাস করতেন। ইতোপূর্বেও পারিবারিক কলহের জেরে একাধিকবার স্ত্রী ও শ্যালকদের সাথে মারামারি ও মামলা মোকদ্দমার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও (২৪ এপ্রিল) তাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহত মাহমুদের ঘনিষ্টজন এক ব্যক্তি জানান, বিয়ের পর থেকে মাহমুদ তার স্ত্রী ও শ্যালকদের দ্বারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার। মিথ্যে অভিযোগে তারা প্রায়ই তাকে হেনস্থা করাসহ মামলা দিয়ে পেরেশান করেছে। একাধিকবার এব্যাপারে মধ্যস্থতা করে দিয়েছি। কিন্তু স্ত্রী ইয়াসমিন তবুও তাকে সবসময়ই চাপের মধ্যে রাখতো। স্বামী হিসেবে তাকে কোন সম্মান করতো না। কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে মাহমুদ তা সহ্য করেই সংসার করে যাচ্ছিল।
ঘটনার আগের রাতেও মাহমুদের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তার অনুমতি ছাড়াই স্ত্রী ইয়াসমিন তার ভাই সাদ্দামের সাথে এক আত্মীয়ের বিয়েতে যায়। গভীর রাতে ফিরলে মাহমুদ তাকে ঘরে উঠতে না দিয়ে বলে যেহেতু আমার অনুমতি ব্যতিরেকেই ভাইদের সাথে গেছো, তাহলে এখন তাদের সাথেই থাকো। এর প্রেক্ষিতেই স্ত্রী ও শ্যালকরা তাৎক্ষনিক দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে মাহমুদকে বেধড়ক মারপিট করে।
তাছাড়া লাশের যে ঝুলন্ত ছবি দেখা যাচ্ছে তাতে লাশের পা মাটির সাথে লেগে ছিল। তাতেই সন্দেহ হয় যে, তাকে মেরে ফেলে ঘরের তীরের সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। একারণে আমরা চাই লাশের পোস্ট মর্টেম করা হোক তাহলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। কিন্তু মাহমুদের শ্যালকরা হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে পুলিশকে চাপ দিচ্ছে যেন পোস্ট মর্টেম না করা হয়। আর যদি আত্মহত্যা করে থাকে, তাহলে তাদের মানসিক নির্যাতনের কারণেই করেছে।
এব্যাপারে মাহমুদের বড় শ্যালক রেলওয়ে স্টেশনের চায়ের দোকানের মালিক সাদ্দামের সাথে কথা হলে তিনি উপরোক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাহমুদ ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনের মধ্যে মনোমালিন্য ছিলো। কারণ মাহমুদ নেশা করতো। তাছাড়া ইতোপূর্বে সে একটা পরকীয়ায় জড়িয়েছিল। অনেক চেষ্টা করে তা থেকে সরিয়ে তাদের সংসার টিকিয়ে রাখা হয়েছে এবং আমরাই তাকে বাড়ি করে দিয়ে এখানে এনে রেখেছি। অথচ এখন অহেতুক মিথ্যে অভিযোগে আমাদের হয়রানী করা হচ্ছে। সে ঘরের তীরের সাথে লাইলনের রশি (দড়ি) দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ফইম উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে নিহতের বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট করার পর লাশ থানায় আনা হয়েছে। এতে গলায় রশির দাগ পাওয়া গেছে। শরীরে আর কোন আঘাতের চিহ্ন নেই।
তারপরও ইতোপূর্বে মারধরের অভিযোগ উঠার কারণে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য ময়না তদন্ত করতে নীলফামারী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এঘটনায় উভয় পরিবারের কেউই কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে একটা অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।