সফিকুল ইসলাম শিল্পী, রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) থেকে:
ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী উপজেলার এক নিভৃত গ্রাম—বুড়িপুকুর। এখানকারই এক ভাঙাচোরা কাঁচা ঘরে বেড়ে ওঠা জুই আক্তার, যার বাবা জাহাঙ্গীর আলম একজন অসুস্থ ও অসহায় ভ্যানচালক। মা পান্না বেগম গৃহিণী। অভাবের সাথে প্রতিদিন লড়াই করে চলা এই পরিবার এবার আলোচনায়—কারণ তাদের একমাত্র মেয়ে জুই ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এ যেন এক নিঃশব্দ বিস্ময়।
জুই জানায়, “ভালোভাবে প্রাইভেট পড়তে পারিনি। বই-খাতা জোগাড় করাও অনেক সময় কঠিন ছিল। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। বাবার কষ্ট আর মায়ের স্বপ্নই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।”
সাধারণ গ্রামীণ ঘরের মেয়ে হয়েও জুইর মধ্যে আছে অদম্য মনোবল। সকালবেলায় চুলার ধোঁয়ার পাশে পড়া, রাতের অন্ধকারে হারিকেনের আলোয় অংক কষা, এবং প্রতিনিয়ত না বলা শত সংকটের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয়েছে তার এই সাফল্যের গল্প।
জুইর মা বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, কিন্তু মেয়ের স্বপ্ন বড়। ডাক্তার হইতে চায়। ওর এই ফলাফলে খুব গর্ব লাগে, কিন্তু ভরসা নাই সামনের পথটা কেমনে চলব।”
জুইয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, সীমাবদ্ধতার মাঝেও সে ছিল অধ্যবসায়ী ও মনোযোগী। সিডি সহকারী শিক্ষক আখতারুজ্জামান বলেন,
“জুইয়ের মতো শিক্ষার্থীরা সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত। সরকারি কিংবা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে সে অনেক দূর যেতে পারবে।”
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই প্রতিভাবান মেয়েটি কি তার স্বপ্নপূরণের পথে এগোতে পারবে?
উচ্চমাধ্যমিক ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মতো চ্যালেঞ্জিং পথে কি পাশে দাঁড়াবে কেউ?
জুই আক্তারের মতো হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী আজো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিকূলতার মাঝেও স্বপ্ন দেখে। তাদের জন্য প্রয়োজন সহযোগিতার হাত, যাতে স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকে কেবল পরীক্ষার ফলাফলে নয়, বাস্তব জীবনেও।