ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি-
অবৈধভাবে বালু তোলায় ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় পদ্মা নদীতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে; এতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি।
ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে ওই অঞ্চলের সাতটি গ্রামের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার।
জেলা প্রশাসন বলছে, অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নদীর পাড় রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
নদী ভাঙনে হরিরামপুর ইউনিয়নের জাকেরেরশুরা খালের মাথা থেকে গাজিরটেক ইউনিয়নের হাজিগঞ্জ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং উপজেলা সদরের সবুল্যা শিকদার ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সুপারির বাগান এলাকা পর্যন্ত এক কিলোমিটার সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে।
টিলারচর, ইন্তাজমোল্যার ডাঙ্গী, সবুল্যা শিকদারের ডাঙ্গী, হরিরামপুর ইউনিয়নের জাকেরের শুরাসহ অন্তত সাতটি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব এলাকা সংলগ্ন পদ্মা নদী থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দিনের পর দিন অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। ফলে নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করা না হলে রক্ষা পাবেন না তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চরভদ্রাসন উপজেলার জাকেরেরশুরা বাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে প্রস্তাবিত নদীর পাড় রক্ষার প্রকল্পের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় ক্ষোভ জানিয়ে স্থানীয় নারী-পুরুষ অনেকেই কথা বলেন। তাদের দুর্ভোগের কথা গণশুনানিতে তুলে ধরেন তারা।
৭০ বছর বয়সি আব্দুর রশিদ বলেন, “এই নদী থেকে গত সরকারের সময় যেভাবে মেশিন দিয়ে দিন-রাত বালু কাটা হয়েছে, এখনও সেভাবেই চলছে। এই অবৈধ কাজ থেমে নাই। আমরা নদী পাড়ের মানুষ অসহায়।”
পরে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল বলেন, “প্রকল্পের গুরুত্বের বিষয় স্থানীয় জনমত ও নদীর পাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। সোয়া তিন কিলোমিটার নদীর তীর অরক্ষিত অবস্থায় আছে, এটাকে প্রোটেকশনের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।
“এ ছাড়া বর্তমান সরকারের নির্দেশনা রয়েছে যে, প্রকল্পের সুবিধাভোগী এলাকাবাসীর মতামত নিতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী গণশুনানি করা হয়েছে এবং মতামত অনুযায়ী দ্রুত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।”
প্রকল্পের বাস্তবায়ন জরুরি, তবে তার আগে জরুরি বালু লুটেরাদের তাড়াতে হবে বলে মনে করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রায় সোয়া তিন কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে প্রাক্কালিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা।
প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন হবে বলে আশার কথা জানিয়ে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছরে কাজ শুরু হবে; যা ২০২৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে।