মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার হিরণ্যকান্দি গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের মেয়ে ঋতু আক্তার ওরফে পানশি বর্তমানে একইসাথে দুই পুরুষের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক রাখছেন—এমন অভিযোগে এলাকাজুড়ে তোলপাড় চলছে।
প্রথম অভিযোগ উঠে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা ৪৪ মোড়ে অবস্থিত ‘স্কিন কেয়ার বিউটি পার্লার’-এর মালিক দিলরুবা আক্তার কলির পক্ষ থেকে। তিনি জানান, ঋতু একইসঙ্গে দুই স্বামীর সংসার করছেন এবং নানা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত।
সরেজমিন তদন্তে মিললো চাঞ্চল্যকর তথ্য
সংবাদকর্মী সরেজমিনে গিয়ে পানশির গ্রামের বাড়িতে দেখা পান তার তথাকথিত স্বামী আব্দুর রহমানকে। তিনি বলেন, “রিতু এখন আলফাডাঙ্গায় ভাড়া থাকেন, আমি তাকে তালাক দেইনি। তবে সে আমাকে তালাক দিয়েছে বলে দাবি করে।”
এদিকে রিতুর আরেক স্বামী, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মহেশ্বরদী গ্রামের প্রবাসী আজিজুল ইসলাম জীবন জানান, তিনি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঋতুকে মোবাইল ফোনে বিয়ে করেন এবং এপ্রিল মাসে দেশে ফিরে কাবিননামা সম্পন্ন করেন।
ঋতুর পাল্টা অভিযোগে ঘুরে দাঁড়ায় কাহিনী
আলফাডাঙ্গার আলাউদ্দিন ভাইয়ের বাড়িতে ভাড়া থাকা রিতু এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “কলি নিজের দেবর মারুফকে বিয়ে করেছেন এবং তার আগের স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। অথচ একসময় একই ছাদের নিচে দুই ভাইয়ের সঙ্গেই বসবাস করেছেন।”
ঋতুর দাবি, দিলরুবা তাকে দেহ ব্যবসায় জড়াতে চেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, “আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কলি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।”
দুই নারী, দুই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে দিলরুবা আক্তার কলি প্রথমে সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, “আমি আমার স্বামীকে তালাক দিয়ে আমার দেবর মারুফকে বিয়ে করেছি।” তবে রিতুর বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, “ঋতু একজন অসামাজিক নারী। আমি প্রমাণ পেয়েই তাকে পার্লার থেকে বের করে দিয়েছি।”
দিলরুবার প্রথম স্বামী রফিকুল ইসলাম (ওরফে মফিজুর) বলেন, “কলি আমার আপন ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছে। এটা আমার জন্য বিশাল বিশ্বাসঘাতকতা।”
আইনি ও সামাজিক প্রশ্ন
ঋতুর স্বামী আজিজুলের প্রথম স্ত্রী মালা বেগম, যিনি বর্তমানে ওমানে অবস্থান করছেন, বলেন, “আমার স্বামী আমাকে তালাক না দিয়েই অন্য নারীকে বিয়ে করেছে। আমি সন্তানের কথা ভেবে আইনি ব্যবস্থা নিইনি, তবে আমার স্বামীর প্রতিশ্রুতি আছে—ঋতুকে সে তালাক দেবে।”
উপসংহার
এই ঘটনার ভেতরে রয়েছে বহু স্তরের পারিবারিক জটিলতা, সামাজিক অনৈতিকতা ও আইনি প্রশ্ন। একদিকে নারীর বিরুদ্ধে একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ, অন্যদিকে অভিযুক্ত নারীর পাল্টা অভিযোগে ফাঁস হয়েছে অভিযোগকারীর ব্যক্তিগত জীবন।
এই ঘটনা সমাজে নারীর অবস্থান, সামাজিক মূল্যবোধ এবং সম্পর্কের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রশাসন ও সমাজের উচিত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।