হাবিবুর রহমান, নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় মামুনুর রশিদ (৩২) নামে এক কৃষককে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আজিজসহ কয়েকজন পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওসি, এসআই ও এএসআইসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলার চৌমুহনী বাজারে “সর্বস্তরের জনগণ” ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। কর্মসূচিতে শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে মামুনুর রশিদের মুক্তি এবং অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, পূর্ব কলমুডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মামুনুর রশিদকে মাদক মামলায় মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। তার প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
ভুক্তভোগী মামুনুর রশিদের স্ত্রী সামসুন নাহার বলেন,
“প্রতিবেশী আলম মৌলভীর সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। পুলিশ এক লাখ টাকা নিয়ে আমার স্বামীকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়েছে। তারা রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়, কিছু বলার সুযোগও দেয়নি। আমার ছোট ছোট সন্তানদের কান্নাকাটি সত্ত্বেও পুলিশ নিষ্ঠুর আচরণ করেছে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মানববন্ধনে অংশ নেওয়া পারভেজ অভিযোগ করেন,
“আমার বৈধ মোবাইলের দোকান থেকেও পুলিশ ২১টি ফোন জব্দ করে। এর মধ্যে ১০টি ফোন গায়েব করে বাকি ১১টিকে চোরাই মোবাইল হিসেবে দেখায় এবং আমাকে জেলে পাঠানো হয়।”
কলমুডাঙ্গা মানব কল্যাণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি জিয়াউর রহমান মাস্টার বলেন,
“ওসি আব্দুল আজিজ সাপাহারে যোগদানের পর থেকেই মিথ্যা মাদক মামলার অভিযোগে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন। মামুন একজন নিরপরাধ, ধার্মিক কৃষক। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই এবং অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত প্রত্যাহার দাবি করছি।”
স্থানীয় মসজিদের খতিব মাওলানা রমজান আলী বলেন,
“মামুন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি, তাকে কখনও মাদক সেবন করতে দেখা যায়নি। একজন নিরপরাধ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো খুবই দুঃখজনক। দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের আমরা এলাকায় চাই না।”
বক্তারা জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে থানা ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
পুলিশ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে সাপাহার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শ্যামলী রানী বর্মন সাংবাদিকদের বলেন,
“ঘটনাটি সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। কোনো পক্ষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গ্রেপ্তারের পটভূমি
উল্লেখ্য, গত ৪ জুলাই (শুক্রবার) মধ্যরাতে পুলিশ উপজেলার পাতাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব কলমুডাঙ্গা (সাঁওতালপাড়া) গ্রাম থেকে কৃষক মামুনুর রশিদকে গ্রেপ্তার করে।