সত্যজিৎ দাস:
সিলেট বিভাগজুড়ে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরের পর হঠাৎ করেই তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়,যা কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ফসলের মাঠ,ঘরবাড়ি এবং চা-বাগানে ভয়াবহ ক্ষতি করে গেছে। মৌলভীবাজার,সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শিলাবৃষ্টির তাণ্ডব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,’দুপুরের দিকে হঠাৎ করেই আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। এরপর প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির সঙ্গে ঝরতে থাকে বড় আকারের শিলা। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, বড়লেখা, জুড়ী, ছাতক, দিরাই, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও বিশ্বনাথে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়। কিছু এলাকায় শিলার আকার টেনিস বলের সমান ছিল,যা গাছপালা ও ঘরবাড়িতে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়েছে’।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান,’মাঠের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানের শীষ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে, চা-বাগানের কাঁচা পাতা ঝরে পড়েছে এবং সবজি বাগান প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে’।
মৌলভীবাজারের এক কৃষক বলেন,”কয়েক মিনিটের শিলাবৃষ্টি আমার পুরো ক্ষেত শেষ করে দিয়েছে। এবার কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবো বুঝতে পারছি না।”
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও বাহুবলে অনেক কাঁচা ঘর ধসে পড়েছে এবং টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকানের ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পণ্য নষ্ট হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,’ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে দ্রুত সহযোগিতা দেওয়া হবে।মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বলেন,”শিলাবৃষ্টির কারণে কৃষি ও আবাসন খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ধারণের কাজ চলছে। খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে,আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে,সিলেট অঞ্চলে মৌসুমি পরিবর্তনের কারণে এমন দুর্যোগ হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,’জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে আকস্মিক দুর্যোগের প্রবণতা বাড়ছে। ভবিষ্যতে কৃষি ও অবকাঠামো খাতে জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ফসলের ক্ষতি কমাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সিলেট বিভাগের মানুষ এখন ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে প্রশাসনের সহায়তার অপেক্ষায় আছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও বাসিন্দারা দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারি উদ্যোগ চান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।