সাকলাইন যোবায়ের, কুমিল্লা
সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান শুরু হতে আর মাত্র একদিন বাকি। রমজানকে সামনে রেখে কুমিল্লায় গ্রামগুলোতে চলছে মুড়ি ভাজার উৎসব। কুমিল্লার বিসিকের মুড়ির মিলগুলোতে ও আশপাশের বিভিন্ন মিলগুলোতে দিন-রাত মুড়ি উৎপাদন করছেন কর্মচারীরা।
প্রাচীনকাল থেকে রমজানের ইফতারের তালিকায় মুড়ি একটি অন্যতম খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিধায় রোজা মাসে এর চাহিদা বেড়ে যায়। মুড়ির চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত সময় কাটাচ্ছেন এ পেশার সঙ্গে নিয়োজিত শ্রমিকরা।
কুমিল্লার বাগমারা, চান্দিনা, পালপাড়া, বেলতলিসহ বিভিন্ন গ্রামে চলছে হাতে ভাজা টাপি ধানের মুড়ি ভাজার উৎসব। ওই সব গ্রামের মুড়ি কুমিল্লার শহরের চকবাজার, রাজগঞ্জ ও বাদশামিয়ার, বালুতুপা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাগমার, চান্দিনা, পালপাড়া, বেলতলিসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রতিটি ঘরেই সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা হাতে ভাজা দেশি মুড়ি ভাজার কাজ করেন।
বাগমার ও পালপাড়া গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, দু’ভাবে মুড়ি ভেজে তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। যারা আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল, তারা নিজেরা বাজার থেকে ধান কিনে প্রক্রিয়াজাত করে মুড়ি ভেজে থাকেন। তারা প্রতি মণ থেকে ৫০০ টাকার কম বেশি আয় করে থাকেন । আর যারা আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল না তাদেরকে আড়তদাররা বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন গড়ে ২ মণ ভাজতে পারেন। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ পালাক্রমে সবাই মুড়ি ভেজে থাকেন। তবে পুরুষের চেয়ে নারীরা এ কাজে বেশি সময় দেন বলে জানান তারা। মুড়ি ভাজার দরুন তাদের দীর্ঘক্ষণ তাদের জ্বলন্ত চুলার কাছে থাকতে হয় বলে তাদের গায়ের রং কালো ও তামাটে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় রোজার মাসে তাদের কিছুটা বেশি টাকা পয়সা আয় হয় বলে জানান তারা। ওই সব এলাকার লোকজন বেশির ভাগ মোটা মুড়ি হাতে ভাজা দেশি মুড়ি ভেজে থাকেন। টাপি ধানের মুড়ি, ঘি-গজ ধানের মোটা মুড়ি, বিসিক বি-আর ১১, স্বর্ণা, আছিয়া এসব ধানের মুড়ি ভাজা হয়।
গতকাল নগরীর চকবাজার, রাজনগর, বাদশামিয়ার বাজারের মুড়ি দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। চকবাজারের মামনুন স্টোর, কালীপদ স্টোর ও শান্তর মুড়ি দোকানসহ কয়েকটি মুড়ি দোকান ঘুরে জানা যায়, স্বর্ণা ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা, আছিয়া মুড়ি প্রতি কেজি প্রকার ভেদে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, রজনি মুড়ি ১০০ টাকা, টাপি ধানের দেশি মুড়ি ১৬০ টাকা ও ১৭০ টাকা, ঘি-গজ মুড়ি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুড়ির দোকানদার আনোয়ার হোসেন বলেন, রোজার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে চালের কারণে ও মিল মালিকদের দরুন মুড়ির দাম কিছুটা বেড়েছে।
কুমিল্লার পাইকারি বড় বাজার তেরিপট্টির এক নম্বর গেইট দিয়ে বাজারে প্রবেশ করে কথা হয় পাইকারি মুড়ি দোকানদার মামনুন স্টোরের মালিক জিএসএম মামনুনের সঙ্গে। তিনি জানান, আমরা তিন ভাই এই দোকানে ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। আমরা ২ ভাই মাস্টার্স পাশ আরেক জন এসএসসি। মিল থেকে একটু কম দামে রাসায়নিক পদার্থ হাইড্রোজ ব্যবহার করে ওইসব মুড়ি আমরা বস্তা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কম হলেও আমরা এগুলো দোকানের বিক্রি করি না। আমরা সর্বোচ্চ ভালো মুড়িগুলো দোকানে বিক্রি করি।
কুমিল্লার চকবাজারে মুড়ি কিনতে আসা মোস্তাক মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, আমি আমার দোকানের জন্য পাইকারি মুড়ি নিয়ে যায় চকবাজার থেকে। রোজার মাসে মুড়ির চাহিদা একটু বেশি থাকার কারণে অন্যান্য মাস থেকে এ মাসে মুড়িটা ভালো বিক্রি হয়।