জাবেদ শেখ,শরীয়তপুর:
শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের চিডারচর এলাকায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন। ভাঙনের তীব্রতায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাসিন্দা। হঠাৎ করে বর্ষার আগেই ভাঙন শুরু হওয়ায় ক্ষোভ আর আশঙ্কায় ডুবছে পুরো চরাঞ্চল।

স্থানীয়রা জানান, কুন্ডেরচর ইউনিয়নটি পদ্মা নদীর মাঝামাঝি চরের মধ্যে হওয়ায় প্রতি বছর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে ভাঙন দেখা দেয়। গত ৬-৭ বছরে ইউনিয়নের প্রায় ১০-১২টি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও অসংখ্য বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত মৌসুমে মৃধা কান্দি, আমির মল্লিক কান্দি, আঃ মান্নান মল্লিক কান্দি, গনি মল্লিক কান্দি, বেপারী কান্দি, নুডু মাদবর কান্দি, বাবুরচর, আব্বাস বেপারী কান্দি ও সরল খার কান্দিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। চলতি মৌসুমেও এসব এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।ভাটকুল বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো হুমকির মুখে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে ভাটকুল বাজার, বাবুরচর বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল, কিন্ডারগার্টেনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং হাজার হাজার মানুষের বসতভিটা পদ্মার গর্ভে হারিয়ে যাবে।
চিডারচরের গনি মল্লিক কান্দির বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম রতন মল্লিক বলেন,অনেকবার আমাদের ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। এখন আবার যদি ভাঙন শুরু হয়, তাহলে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি, তাহলে হয়তো কিছুটা রক্ষা পেতাম।
চরাঞ্চলের সমাজপতি এম.এ লতিফ মল্লিক বলেন, পদ্মায় পানি বাড়লেই আমাদের গ্রামের দিকে ভাঙন শুরু হয়। এবারও একই অবস্থা। স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, ফসলি জমি সবকিছুই হুমকির মুখে রয়েছে। আমরা চাই, সরকার অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিক।
এদিকে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, কুন্ডেরচর এলাকাটি পদ্মা নদীর মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। ওই এলাকায় বড় কোনো প্রকল্প নেওয়া লাভজনক নয়, কারণ নদীর এপাশেই আমাদের একটি বড় প্রকল্প রয়েছে।
তাঁর এই বক্তব্যে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন-কোনো এলাকা নদীর মাঝামাঝি চরে থাকলেই কি সেখানে মানুষ বাস করে না? সেখানে সরকারি দায়িত্ববোধ থাকেনা?
কুন্ডেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বেপারী বলেন,বর্ষা শুরুর আগেই ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পুরো ইউনিয়নই বিলীন হয়ে যাবে। বেড়িবাঁধ ছাড়া এই ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়।
এবিষয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, কুন্ডেরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি লিখিতভাবে জানাতে বলেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
স্থানীয়দের একটাই দাবি-পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অলাভজনক বা মধ্যাঞ্চল” বলেই উপেক্ষা করার মানসিকতা মানবিকতার পরিপন্থী। এখনই সময় কুন্ডেরচরের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।