ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না—এমন অভিযোগ সাধারণ সেবাপ্রার্থীদের মুখে এখন মুখরিত। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি মিউটেশন বা নামজারিতে অতিরিক্ত ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়, যা নির্ধারিত সরকারি ফি ১১৭০ টাকার বহু গুণ বেশি।
ঘুষ দিলেই দ্রুত, না দিলে মাসের পর মাস
স্থানীয়রা জানায়, চুক্তি বা ঘুষ দিলে কয়েক দিনের মধ্যে ফাইল এগোয়, আর না দিলে মাসের পর মাস ফাইল পড়ে থাকে। বিশেষ করে জমির নামজারি, খতিয়ান প্রদর্শন, খাজনা আদায় ও অনলাইন আইডি খোলাসহ সব কাজে টাকা না দিলে ‘কাজ হয় না’ বলেই জানিয়ে দেন সংশ্লিষ্টরা।
চতুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল হকের বিরুদ্ধে এই অনিয়মের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি।
দালালদের মাধ্যমে বাণিজ্য, কম্পিউটার দোকানগুলোর সংশ্লিষ্টতা
চতুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আশপাশে অবস্থিত সেলিম মুন্সি, পান্নু শেখ, জাহিদ ঠাকুর ও রবিউল ইসলামের কম্পিউটার দোকানগুলোতে বেশিরভাগ অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি কর্মকর্তার সাথে সমন্বয়ে এই দোকানগুলোর একটি অংশ অনিয়মে জড়িত এবং তারা সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে।
সেবা প্রত্যাশীদের অভিজ্ঞতা: “অফিস খরচ না দিলে ফরওয়ার্ডিং হবে না”
এহরামুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি বলেন, “বাবার মৃত্যুর পর মিউটেশন করতে গিয়ে ৩-৪ দিন ঘোরাঘুরির পর কর্মকর্তারা বলে দিলেন—অফিস খরচ না দিলে কাজ হবে না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ১ হাজার টাকা দিয়ে কাজ করালাম।”
সৌদি প্রবাসী নাজমুল হোসেন বলেন, “৮ শতাংশ জমির মিউটেশনের জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করে তারা। সরকারি খরচ বাদেও এই টাকাই দিতে হয়। তাহলে কাজ ৭ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে, এমন আশ্বাস দেয়।”
চতুল ইউনিয়নের সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আহসান হাবিব হাসান এবং বাইখীর চৌরাস্তার মিলন শেখ বলেন, “আমরাও কোনো মিউটেশন ৫-৬ হাজার টাকার কমে করাতে পারিনি।”
ভূমি কর্মকর্তা জহিরুল হক বলেন, “যা চলতেছে তাই”
ভূমি কর্মকর্তা জহিরুল হককে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে চতুর্থবার রিসিভ করে সংক্ষিপ্তভাবে বলেন,
“যা চলতেছে তাই। এখন আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।”
প্রশাসন, নাগরিক সংগঠন ও সচেতন মহলের প্রতিক্রিয়া
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মাসুদ রানা বলেন, “সরকার যেখানে জনগণের সেবা দিতে তৃণমূলে কাজ করছে, সেখানে এসব কর্মকর্তারা বাধা হয়ে দাঁড়ালে আমাদের আন্দোলনে যেতে হবে।”
দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসানউজ্জামান বলেন, “দুর্নীতির প্রবণতা বেশি এমন জায়গায় প্রশাসনের সরাসরি নজরদারি বাড়ানো জরুরি।”
সুজন-এর (সুশাসনের জন্য নাগরিক) ফরিদপুর শাখার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন বলেন, “সেবা ডিজিটাল হলেও তা পরিচালনা করছে মানুষ। কর্মকর্তাদের মানসিকতা না বদলালে দুর্নীতি বন্ধ হবে না।”
এসিল্যান্ড: “সরাসরি অফিসে আসুন, দালালের কাছে নয়”
বোয়ালমারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন,
“অনলাইন সেবায় দুর্নীতি কমেছে, তবে অনেকেই বুঝতে না পেরে দালালের কাছে গিয়ে হয়রানির শিকার হন। তাই সরাসরি এসিল্যান্ড অফিসে আসতে আমরা সবাইকে উৎসাহ দিচ্ছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”