শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরার মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত সাতটি সেতু এক থেকে দেড় মাসের ব্যবধানে ধসে পড়েছে। ফলে জেলার সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি—এই তিন উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রামের সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ধসে পড়া এসব সেতু ছিল পাকা ও ঢালাই করা। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সেতুগুলোর ভেঙে পড়ায় শুধু সাধারণ মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগই নয়, চিংড়ি ঘের অধ্যুষিত এলাকার মৎস্যচাষীরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থী, রোগী ও ব্যবসায়ীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাধ্য হয়ে তারা নিজেরা অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন সেতু ধসের জায়গায়। তবে এগুলো অস্থায়ী ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থেকেই যাচ্ছে।
যেসব সেতু ধসে পড়েছে
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত সাতটি সেতু সম্প্রতি ধসে পড়ে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- সোনাতলা নজরুলের ঘেরের সামনে (নির্মাণ: ২০১৮, দৈর্ঘ্য: ৪০ ফুট)
- টিকেট মাজেদ সরদারের বাড়ির সামনে (২০১৭, ৪০ ফুট)
- একই এলাকার খালের ওপর (২০১৭, ৩০ ফুট)
- ব্যাংদাহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনে (২০১৬, ৪০ ফুট)
- শিমুলবাড়িয়া কালিদাসের বাড়ির সামনে (২০১৫, ৪০ ফুট)
- রওশন খোড়ার বাড়ির সামনে (২০১৫, ৩০ ফুট)
- এল্লারচর বাজারসংলগ্ন (২০১৪, ৪০ ফুট)
দুর্ভোগের চিত্র
শিক্ষক বিমল বসু জানান, “আমাদের এলাকা থেকে ফিংড়ি হাইস্কুলে অনেক শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। এখন তারা বাঁশের সাঁকো পার হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে।”
শিক্ষার্থী শবনম শারমিন বলেন, “আগে সেতু ছিল, তখন সহজে স্কুলে যেতে পারতাম। এখন বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়, খুব ভয় লাগে।”
এল্লারচরের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ গাজী জানান, “ব্রীজটি ভেঙে পড়ায় মাছ বাজারে পৌঁছাতে অনেক ঘুরে যেতে হয়, এতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লাগছে।”
কারণ ও প্রশাসনের বক্তব্য
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোয়েব আহমেদ জানান, “সেতুগুলো যখন নির্মাণ করা হয়, তখন মরিচ্চাপ নদী প্রায় ভরাট ছিল। কিন্তু ২০২০-২১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী পুনঃখনন করায় নদীর প্রস্থ ও স্রোতের চাপ বেড়ে যায়। এতে দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে সেতুগুলো ধসে পড়ে।”
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে ধসে যাওয়া সেতুগুলোর মধ্যে চারটি নতুনভাবে নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, “সেতুগুলো নির্মাণের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত বা সিএস রেকর্ড অনুসরণ করা হয়নি। নদীর পুরনো প্রস্থ বিবেচনায় না রাখার কারণেই এমন ধসের ঘটনা ঘটেছে।”
তিনি জানান, ভবিষ্যতে নতুন সেতু নির্মাণের সময় সিএস রেকর্ড ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক করা উচিত।