বিধান মন্ডল (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
দলীয় কোনো পদপদবী নেই। তবে নিজেকে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা যুবদলের নেতা পরিচয় দিয়ে নিজ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছেন মাহফুজ খান নামে এক যুবক। এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, শালিস বাণিজ্য ও থানায় দালালি করা তার পেশা। তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তাকে নানাভাবে হুমকি ও হয়রানি করা হয়। এমনকি তার থেকে রেহাই পাচ্ছে না স্থানীয় সাংবাদিকরাও।
সম্প্রতি উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের হায়দার খাঁনের ছেলে কথিত যুবদল নেতা মাহফুজ খাঁন প্রতিপক্ষের জমি দখল ও জোর করে মেহগনি গাছ কাটার অভিযোগে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলার প্রেক্ষিতে স্থানীয় সাংবাদিক হারুন-অর-রশীদ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পরে ওই ফেসবুক পোস্টটি কথিত যুবদল নেতা মাহফুজের নজরে এলে তিনি আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে সাংবাদিক হারুন-আর রশিদকে হুমকি দেন। হারুন-অর-রশীদ বাংলানিউজ২৪-এর ফরিদপুর প্রতিনিধি ও দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সালথা উপজেলা সংবাদদাতা।
সাংবাদিক হারুন-আর রশিদ বলেন, কথিত যুবদল নেতা মাহফুজের নামে জমি দখল ও জোর করে মেহগনি গাছ কাটার অভিযোগে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলার প্রেক্ষিতে আমি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছি। পোস্টে আমি লেখেছি – সালথায় পদবিহীন এক যুবদল কর্মীর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের জমি দখল ও মেহগনি গাছ কেটে নেওয়ার হুমকির অভিযোগ! কোর্টে অভিযোগ দায়ের।
এরপর মাহফুজ আমাকে ফোন করে বলেন, তুমি পত্রিকা ও ফেসবুকে কি লিখবা তা আমার কাছে থেকে জেনে ও শুনে লিখবা। তুমি ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে লিখো কত বড় সাহস তোমার। আরো সাংবাদিক আছে তারা তো আমার বিরুদ্ধে কিছু লিখেনা। তুমি তোমার ফেসবুক পোস্ট এখুনি ডিলেট করবা। তা-না হলে তোমাকে দেখে নিবো। তুমি মিথ্যা ফেসবুকে পোস্ট দাও, তুমি সরেজমিনে এসে যাঁচাই-বাছাই করে নিউজ করো।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মাহফুজ খানের বিরুদ্ধে একই উপজেলার সেনহাঁটি গ্রামের হারুনার রশিদ (৪০) নামের এক ব্যক্তি তার জমি জোর করে দখল ও মেহগনি গাছ কেটে নেওয়ার হুমকি প্রদানের অভিযোগে আদালতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। গত ৭ জুলাই অভিযোগটি আদালতে দাখিল করেন।
স্থানীয়রা জানান, মাহফুজ খাঁন নিজেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক পোস্টারে সালথা উপজেলা যুবদলের নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তবে তার কোনো পদপদবি নেই বলে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বিএনপির এক প্রভাবশালী নেত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে মাহফুজ সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে এলাকার সাধারণ মানুষকে হুমকি-ধামকি ও জোর করে চাঁদা দাবি এবং হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি থানায় দালালি ও সালিশ বাণিজ্য করছে। এমনকি নেত্রীর পরিচয় ব্যবহার করে স্থানীয় থানা পুলিশকেও প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ রয়েছে মাহফুজের বিরুদ্ধে।
তবে কথিত যুবদল নেতা মাহফুজ খাঁন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা। আমি রাজনৈতিক পরিচয়ে কোনো অন্যায় অপকর্ম করিনি। আপনি সরেজমিনে এসে দেখতে পারেন।
সালথা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, নিউজ প্রকাশের জেরে একজন সাংবাদিককে হুমকি প্রদান কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রেসক্লাবে মিটিং করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিবো।
সাংবাদিককে হুমকির ব্যাপারে সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে আমরা বিশ্বাস করি। কেউ যদি দলীয় পরিচয়ে অপকর্ম করে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদপুর জেলা যুবদলের সভাপতি মো. রাজিব হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। ফ্রি হলে পরবর্তীতে ফোন করে বক্তব্য দেওয়ার কথা বলেন।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন বলেন, দলীয় পরিচয়ে সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা স্বাধীন সাংবাদিকায় বিশ্বাসী। তাই নেতাকর্মীদের আরও সংযত হওয়ার অনুরোধ করবো।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, হুমকির বিষয়ে ওই সাংবাদিক থানায় অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।