শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ট্রাক ও মিনিবাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২২ জুলাই) বেলা ৩ টায় সৈয়দপুর-রংপুৃর মহাসড়কের মনসুরের ইটভাটা মোড় সংলগ্ন এলাকায় সংঘটিত এই দূর্ঘটনায় কেউ নিহত না হলেও ট্রাক ও বাসের হেলপার জুইজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। ট্রাকের হেলপারকে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রাকের ভিতরে আটকে পড়া অবস্থা থেকে প্রায় ১ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ট্রাকের ড্রাইভার ও যাত্রীসহ মোট ১৪ জন আহত হয়েছেন। এসময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে উভয় পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। এতে অনেক গাড়ি শহরের ভিতর দিয়ে চলাচল করে।
জানা যায়, ট্রাকটি দিনাজপুর থেকে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে পৌছলে ট্রাকের সামনের বাম পাশের চাকা হঠাৎ পাংচার হয়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ড্রাইভার। ফলে তা বিপরিত সাইডে চলে যায় এবং বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এসময় ট্রাকের ভিতর আটকা পড়ে ড্রাইভার ও হেলপার। ড্রাইভারকে সহজে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও হেলপার ট্রাকের দরজায় চাপা পড়ে। এক ঘন্টা নানা কসরত চালিয়ে পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেন। কিন্তু তার দুই পায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি ট্রাক ড্রাইভার সুজন মিয়াও একই কথা জানান। মূলতঃ চাকা বাস্ট হওয়ার কারণেই এই দূর্ঘটনায় পতিত হয়েছি। নিয়ন্ত্রণ হারালেও দ্রুত গতি কমিয়ে ট্রাকটি থামানোর চেষ্টা করেছিলাম বলেই ভয়াবহ কিছু ঘটেনি। বাসের চালক ও যাত্রীরা তেমন আহত হননি। তবে বাসের হেলপার এবং আমি ও আমার হেলপার গুরুত্বর আহত হয়েছি। আমি এখানে ভর্তি আর বাস ও ট্রাকের হেলপার দুইজনকেই রংপুরে পাঠানো হয়েছে।
ট্রাক হেলপারের নাম রতন (৩৫)। তিনি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উপজেলার সোলেমান আলীর ছেলে। আর বাসের হেলপারের নাম জাহাঙ্গীর (৩৪) তিনি দিনাজপুর কেন্দ্রীয় টার্মিনাল এলাকার হঠাৎপাড়ার গাজী মুন্সির ছেলে। অন্যান্য আহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার হামিদুর রহমান বলেন, রংপুর থেকে দিনাজপুরগামী গেটলক বাস সোনারতরী (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫০১১৭) ও সেভোক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির ৬ নং ট্রাক (ঝিনাইদহ-ট-১১-২০৫৪) এর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পরিবহনের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে গেছে। এই ঘটনায় গুরুত্বরভাবে আহত হন ট্রাক ড্রাইভার এবং বাস ও ট্রাকের হেলপাররা। তবে ট্রাকের হেলপারের দুই পা চরমভাবে আটকা পড়ে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রাকের ভিতরে। প্রায় ১ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে কাটিং মেশিন দিয়ে ট্রাকের দরজা কেটে তাকে উদ্ধার করা হয়।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ নিঘাত পারভীন বৃষ্টি জানান, ট্রাক ড্রাইভার, হেলপার এবং বাসের হেলপার ও যাত্রীসহ মোট ১৪ জন রোগী এসেছিলো। তার মধ্যে ট্রাক ড্রাইভারকে এখানে ভর্তি করা হয়েছে এবং গুরুত্বর অবস্থা হওয়ায় ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ফইম উদ্দিন বলেন, বাস-ট্রাক সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে গুরুত্বর আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারকে রংপুরে রেফার্ড করা হয়েছে। এসময় মহাসড়কের দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছি। আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গন্তব্যে পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।