মো. শাকিল হোসেন শওকত, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে মডেল মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত দক্ষিণ নাগরপুরের দানকৃত জমির পরিবর্তে সরকারি কলেজ মাঠে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করায় এ সমালোচনার জন্ম হয়েছে।
গত ২৬ জুন বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক শরিফা হক নাগরপুর সফরকালে সরকারি কর্মসূচির বাইরে গিয়ে নাগরপুর সরকারি কলেজ মাঠে মডেল মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওই সময় তিনি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে একটি ফুটবল ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবেও উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ কাজটি ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু’র দীর্ঘদিনের চাপিয়ে দেওয়া পরিকল্পনারই বাস্তবায়ন, যা অতীতে জনরোষের মুখে বাতিল হয়েছিল। বর্তমান প্রশাসন ও বিএনপি ঘনিষ্ঠ নেতাদের যৌথ প্রচেষ্টায় আবারও বিতর্কিতভাবে ওই স্থানেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো।
বিতর্কের পেছনের প্রেক্ষাপট
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, দক্ষিণ নাগরপুরে জনগণের দানকৃত জমিতে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাতিল করে কলেজ চত্বরে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অথচ নাগরপুর সদর ইউনিয়নে শতাধিক শতাংশ খাস জমি থাকা সত্ত্বেও সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গায় মসজিদ নির্মাণকে অবৈধ ও অনৈতিক বলছেন অনেকে।
বিভিন্ন মহল এই সিদ্ধান্তকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনার ব্যবধান রক্ষার নীতির লঙ্ঘন বলেও মনে করছেন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৬৬ সালে নাগরপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. আলীম আল রাজী, যিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি অনুদান নিয়ে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কলেজের জমি ছিল একমাত্র শিক্ষার জন্য, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়।
১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদের আমলে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে স্থানীয় দানকৃত জমিতে সাবেক এমপি খন্দকার আব্দুল বাতেন মডেল মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
জনমত
এই নতুন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকে কেন্দ্র করে নাগরপুরে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি ধর্মীয় স্থাপনার জন্য দখল করে নেওয়া হলে সেটা শুধু আইনগত নয়, নৈতিকভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ।”
জনগণ দাবি জানাচ্ছে, যথাযথ তদন্ত ও জনমত গ্রহণ না করে যেন কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করা হয় এবং পূর্বনির্ধারিত দানকৃত জমিতে মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রমই পুনরায় চালু করা হোক।