শাব্বির এলাহী, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার):
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় ২৪ দিন ধরে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকা লিলা বাউড়িকে অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন সামাজিক সংগঠন ‘হৃদয়ে কমলগঞ্জ’ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা।
গত ১১ জুন রাতে কে বা কারা অসুস্থ লিলা বাউড়িকে হাসপাতালে ফেলে রেখে যায়। এরপর দীর্ঘ ২৪ দিন ধরে তিনি রোদ-বৃষ্টি, পোকা-মাকড় ও অবহেলার মধ্যেই হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে ছিলেন। চলাফেরা করতে না পারায় সেখানেই মলমূত্র ত্যাগ করতেন তিনি। খাবারের জন্য তাকিয়ে থাকতেন আগত রোগীদের স্বজনদের দিকে।
১৪ জুন লিলার অসহায় অবস্থা নজরে পড়ে ‘হৃদয়ে কমলগঞ্জ’ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক মো. সাইদুল ইসলাম ও সাংবাদিক আব্দুল মালিকের। তারা লিলাকে বাঁচাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে পরিচয় জানার চেষ্টা চালান। পাশে দাঁড়ান সমাজকর্মী মো. জুলফিকার আলী সোয়েব, মুয়াজ্জিন মাওলানা শাহিন আহমেদ শিপনসহ আরও অনেকে। মাওলানা শিপন তাকে নিজ হাতে গোসল করিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন।
৪ জুলাই বিকেলে ইবনে সিনা হাসপাতালের শিশু ও চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এস. কে. নাহিদ লিলাকে দেখে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। ৫ জুলাই সকালে ‘হৃদয়ে কমলগঞ্জ’ এর সদস্য ইয়াকুব আলী একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলেন এবং সমন্বিত উদ্যোগে লিলাকে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, “এই মা যেন সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারেন, সেটাই আমাদের চাওয়া। তবে এখন বড় চ্যালেঞ্জ তার চিকিৎসা এবং সার্বক্ষণিক পরিচর্যার জন্য একজন নারী সহকারীর ব্যবস্থা করা।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে লিলার খোঁজ রাখছেন এবং প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাসপাতাল স্টাফদের নির্দেশ দিয়েছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “আমরা তার পরিবারের খোঁজে কাজ করছি। পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য জানানো হয়েছে।”