সিলেট ব্যুরো:-
এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতার উপর হামলা ও গুলিবর্ষনের মামলায় আসামি হলেন তথাকথিত ইউটিউবার, যুবলীগের ক্যাডার মামুন চৌধুরী, মামুন আহমদ উরফে ছেছরা মামুন। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি সিলেট জেলা যুবদলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও মোগলাবাজার থানার মির্জাপুর গ্রামের মো. নামর আলীর ছেলে সাজিব আহমদ বাদী হয়ে ৪৭৭জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আদালতের নির্দেশে সিলেট নগরীর কোতোয়ালি থানায় গত ৩ ফেব্রুয়ারী এ মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় ছেছরা মামুনকে ২৭ নং আসামী হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয়। বাদী মামলার এজাহারে উল্ল্যেখ করেন, ২০২৪ সালের ৩ আগষ্ট বিকেল ৪টার দিকে সিলেট নগরীর চৌহাট্টাস্থ সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার এক দফা দাবি ও ছাত্র-জনতাকে হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন চলছিল। এ কর্মসূচিতে বাদীও অংশ নেন। এসময় মামলার অভিযুক্তরা নগরীর রিকাবীবাজার থেকে মিছিল সহকারে এসে চৌহাট্টায় অবস্থানরত বাদীসহ ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় ছেছরা মামুনের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বাদীকে প্রানে মারার উদ্দ্যেশে মাথা বরাবর গুলি করেন। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বাদীর বাম কানে লেগে মারাত্বক জখমি হন।
যুবলীগের ক্যাডার মামুন এর আগে ২০১৯ সালে ৩০শে নভেম্বর অপহরন ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সিলেট কোতয়ালী থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেফতার হন (মামলা নং– ২৮, ধারা ৩৮৫/৩২৩, ৫০৬ এর ২, ৩৪ দ.বি) ঐ সময় মামুনের বিরুদ্ধে সিলেট শাহপরান (রহ.) থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা হয় (মামলা নং-১৯২)। এরপর তিনি জেল থেকে বের হয়ে হাতে নেন বুম, হয়ে যান তথাকথিত ইউটিউবার। মাঝে মধ্যে সুযোগ বুঝে পরিচয় দেন সাংবাদিক! সেই সাথে আছে খাদিমপাড়ার মা-মনি কিন্টার গার্ডেনের শিক্ষকের পরিচয়।
চতুর মামুন ঝোপ বুঝে কোপ মারেন, তিনি কোন কোন জায়গায় নিজেকে মা-মনি কিন্টার গার্ডেনের শিক্ষক আাবার কখনও সাংবাদিক, সিলেট সিটি অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি, সিলেট সিটিজেন জার্নালিজম ইউনিয়নের সেক্রেটারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ধান্দা ফিকির করে চলেন। মুলত তিনি একজন ইউটিউবার। আধুনিক টিভি নামের তার ইউটিউব চ্যানেল নিয়েও রয়েছে সবার মাঝে ক্ষোভ। কেউ কেউ তাকে ভেদভেদা টিভির সাংবাদিক বলেও ডাকেন।
গত ৫ আগষ্টের পর পুরো দেশ যখন অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদে সোচ্চার ঠিক তখনই চেছরা মামুন নতুন করে জন্ম দেন আরেক কাহিনীর। তার সাথে থাকা আওয়ামী যুবলীগের ক্যাডার ইকবাল হোসেন রাহেল কামালিসহ কয়েকজন সন্ত্রাসীদের নিয়ে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার সময় উপশহর একজন যুবতীর উপর হামলা চালিয়ে যুবতীকে লাঞ্চিত করেন।
মিথ্যা অভিযোগে ঐ যুবতীকে রাস্তায় টানা হেচড়া করে যুবতীর শ্লীতহানী করেন। সে সময় তিনি যুবতীর ভিডিওও করেন। পরে সেটা তার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন। ঐ ঘটনায় যুবতী মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা যায়।
ঐ সময় যুবতীর ঘটনাটির সংবাদ দেশের কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা ও স্হানীয় অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ হয়।
ক্যাডার মামুন এখানেই ক্লান্ত হয়নি। সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে একি বছরের ১০ অক্টোবর রাতে মেজরটিলার মোহাম্মদপুরস্হ এক প্রবাসীর স্ত্রীর বাসায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঢুকে মহিলার স্বামীকে ভয়ভিতী দেখান। এসময় তাদের কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। পরে ২৫ হাজার টাকা ও ৪ আনা ওজনের স্বর্ণের কানের দুল নিয়ে বাসা থেকে চলে যান। যাওয়ার সময় ক্যাডার মামুন, সাজু, উবায়েদউল্লাহ ঘটনা অন্য কাউকে বলতে নিষেধ করেন। যদি ঘটনা জানাজানি হয় তাহলে মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। ঐ ঘটনায় জাহানারা বেগম নামে প্রবাসীর স্ত্রী শাহপরান থানায় অভিযোগ দেন।
সর্বপরি আওয়ামিলীগ সরকারের পতনের পর মামুন ও তার বাহিনী সাংবাদিকতার পরিচয়ে লুটপাট, ছিনতাই, চিনি চোরাচালান, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ এমন কোন কাজ নেই করেনি।
মামুনের উপর উপশহরের ঐ যুবতী মামলা দায়েরের পর থেকে তার সহযোগী ইকবাল হোসেন রাহেল কামালির মাধ্যমে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে বলে জানা গেছে।
এদিকে চতুর মামুন তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নিজে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া ছবি সরিয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে সে নিজেকে কখনও জামায়াত আবার কখনও বিএনপির কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে বলে সুত্র জানায়।