শাওন বেপারী
শরীয়তপুর প্রতিনিধি,
শরীয়তপুরের জাজিরায় একটি বাজারে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছোরহাব মাদবর নামে একজন গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন। গণধোলাইয়ের শিকার ছোরহাব মাদবর বিকে নগর ইউনিয়নের সদর আলী মাদবর কান্দি গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলী মাদবরের ছেলে এবং স্থানীয় আওয়ামিলীগ নেতা রাজ্জাক মাদবরের অনুসারী।

মঙ্গলবার (১১-মার্চ) রাত আনুমানিক ৯’টার সময় উপজেলা বিকে নগর আনন্দ বাজারে চাঁদাবাজি করতে গেলে তাকে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা। পরে আহতাবস্থায় তাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
তবে গণধোলাইয়ের শিকার ছোরহাব ও তার পরিবারের দাবী চাঁদাবাজির সাথে তিনি জড়িত নয়। পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিত ভাবে তাকে মারধর করেছে সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুল সরদারের লোকজন।
সরজমিন গেলে স্থানীয়রা জানান, পাঁচ আগস্টের পর থেকেই আওয়ামিলীগ নেতা রাজ্জাক মাদবরের নেতৃত্বে বাজারটিতে চাঁদাবাজি করে আসছিলো ছোরহাব মাদবরসহ তাদের লোকজন।
এর আগে বাজার মালিক মজিবুর বানিয়া তার ক্রয়কৃত জমিতে দোকান উঠিয়ে কাঁচাবাজার বসান। সম্প্রতি মজিবুর বানিয়া একটি মামলায় জেলে গেলে বাজারটি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিলো রাজ্জাক মাদবরের অনুসারীরা। চাঁদাবাজির বিষয়ে জাজিরা থানায় ছোরহাব মাদবরসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছেন বানিয়া পরিবার।
এছাড়া বাজারে চাঁদাবাজির বিষয়ে আদালতে একটি চাঁদাবাজির মামলা চলমান রয়েছে। যার নাম্বার সিআর-৪০/২০২৫ (জাজিরা)। মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন।
পুলিশ একাধিকবার ঘটনাস্থলে এসে উভয়পক্ষকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বললেও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছিলো রাজ্জাক মাদবরপন্থী ছোরহাবসহ বেশ কয়েকজন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে ছোরহাবকে মারধর করে দোকানী ও স্থানীয়রা।
তবে গণধোলাইয়ের শিকার ছোরহাব ও রাজ্জাক মাদবরের দাবী চাঁদাবাজি করেন না তারা। বাজারে যাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মারধর করেছে সাইদুল সরদারের সমর্থকেরা।
দার্জুন সরদার নামে একজন বলেন, রাজ্জাক মাদবর আগে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা ছিলেন। পাঁচ আগস্টের পর হটাৎ করেই নিজেকে বিএনপি নেতা দাবী করছেন। তিনিসহ তার দলবল বাজারটি দখল করে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। বাজারের দোকানীদের জিম্মি করে টাকা তুলেন তারা। এজন্য বাজারের দোকানী ও স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গণধোলাই দিয়েছে। এখন সেই দায় আমাদের উপর চাপাতে চাচ্ছেন।
স্থানীয় সরোয়ার সরদার ও ইদ্রিস সরদারসহ সরদার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কেউই বাড়িতে থাকেন না। বিভিন্ন মামলায় মজিবুর বানিয়াসহ চেয়ারম্যান সাইদুল সরদার দীর্ঘদিন ধরে জেল হাজতে রয়েছে। এই সুযোগে রাজ্জাক মাদবরপন্থীরা বাজার দখলে নিয়ে চাঁদাবাজি করতেছে। আমাদের বাজার পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না রাজ্জাক মাদবর গ্রুপের লোকজন। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাজারের লোকজন ছোরহাবকে মেরেছে। এখন দায়ভার আমাদের উপর চাপাতে চাচ্ছে।
এদিকে চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করে রাজ্জাক মাদবরের চাচা মোসলেম মাদবর বলেন, বাজারের দোকান গুলো আমাদের জমিতে উঠানো। আমরা আগে সেখান থেকে ভাড়া উঠাইতাম। সে জায়গা দখল করে মজিবর বানিয়া ও সাইদুল সরদার প্রত্যেক দোকান থেকে টাকা উঠিয়ে নেয়। সেখান থেকেই তাদের সাথে বিরোধ চলে আসছিলো। এ নিয়েই গতকাল তাদের লোকজন সোহরাব মাদবরের উপর হামলা করে আহত করে।
এ বিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দুলাল আকন্দ বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।