সত্যজিৎ দাস (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি):
প্রবাসী ও পর্যটননির্ভর জেলা শহর মৌলভীবাজার ক্রমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ নানা প্রয়োজনে এই শহরে আসেন। কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অসংগঠিত ব্যবসা, ফুটপাত দখল ও যানজট।
১০.৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ-গ্রেড শহরটির গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর ফুটপাত এখন কার্যত বেহাত হয়ে গেছে। ৬.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাতের অধিকাংশই দখল করে চলছে অবৈধ ব্যবসা। ভবন ও মার্কেট মালিকরা নিজেদের জায়গার পাশাপাশি ফুটপাতেও অস্থায়ী দোকান বসিয়ে তা ভাড়া দিচ্ছেন।
শহরের পশ্চিমবাজার, সাইফুর রহমান সড়ক, আদালত সড়ক, টিসি মার্কেট, কুসুমভাগ, সদর হাসপাতাল এলাকা ও শ্রীমঙ্গল সড়কের মতো ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে ফুটপাত দখল এখন নিয়মিত দৃশ্য। পথচারীদের বাধ্য হয়ে মূল সড়কে নেমে চলতে হয়, ফলে যানজট আরও তীব্র হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,কুসুমভাগ থেকে পেট্রোলপাম্প পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ফুটপাতে শতাধিক ব্যাটারি চালিত ভ্যানে চলছে ফল, শাক-সবজি, কাপড় ও বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা। সন্ধ্যার পর এসব দোকানে ভিড় বাড়ে, ফলে রাস্তার একাংশ কার্যত ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়।
শুধু ভ্রাম্যমাণ দোকানই নয়,ফুটপাতের বড় একটি অংশ সিএনজি স্ট্যান্ডের দখলে। সারি সারি সিএনজি পার্কিংয়ের কারণে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সড়কে তীব্র যানজট লেগে থাকে।
সূত্র জানায়, কুসুমভাগ এলাকার ফুটপাত থেকে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হয়। পৌরসভার প্রতিনিধি নাজমুল ইসলামের মাধ্যমে প্রতিটি দোকান থেকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। শুধু নভেম্বর মাসেই কুসুমভাগ এলাকা থেকে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। যদিও পৌরসভার এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এ অর্থ রাজস্ব খাতে জমা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান,সাবেক মেয়র ফজলুর রহমানের সময় থেকেই ফুটপাত থেকে নিয়মিত অর্থ উত্তোলন হয়ে আসছে। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কিছুদিন চাঁদা আদায় বন্ধ ছিল। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আবারও একই নিয়মে অর্থ সংগ্রহ শুরু হয়।
ফুটপাত দখলের বিষয়ে এক ফল বিক্রেতা জালাল মিয়া বলেন, “আমরা সপ্তাহে দুইবার ২০০ টাকা করে দেই। সবাইকেই টাকা দিতে হয়, না দিলে ব্যবসা করতে দেওয়া হয় না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বুলবুল আহমেদ বলেন, “ফুটপাত থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে সাধারণ পথচারীদের প্রশ্ন—এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে তো? নাকি আগের মতোই প্রশাসনের চোখের সামনেই ফুটপাত দখল বাণিজ্য চলবে? সময়ই হয়তো সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে!