জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের সম্পদ তছরুপ, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর অর্থ আত্মসাৎ, এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছে বিভিন্ন বাহানায় অর্থ আদায়, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, ছাত্রীদের সাথে অসৎ আচরণ, বিদ্যালয়ে না আসা শিক্ষকের বেতন ভাগাভাগি করে নেওয়া সহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাট সদর উপজেলার শ্যামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল হোসেনের বিরুদ্ধে৷
শ্যামপুর বিদ্যালয়টি আঃ লীগের রাজনীতির দুর্গ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থেকে আয়া পর্যন্ত একই পরিবারের নিকট আত্মীয় স্বজন ৬ জন কর্মরত রয়েছেন- সেই সাথে প্রধান শিক্ষকের নানা অভিযোগ সম্মিলিত একটি তালিকাসহ জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে দেওয়া অভিযোগে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার শ্যামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল হোসেন বিদ্যালয়টিকে পরিবারতন্ত্রে রূপান্তরিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই প্রতিষ্ঠানটি এমপি ভুক্ত হয় ১৯৭২ সালে। তখন সভাপতি হন ততকালীন কৃষক লীগের থানা সভাপতি হোসেন আলী মন্ডল। তারপর তিনি তার সমমানা দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করেন। তখন থেকেই মেধা যোগ্যতা যাচাই ছাড়াই বিভিন্ন পদে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেন। সেই ক্ষমতা বলে সভাপতি হোসেন আলী মন্ডল তার দ্বিতীয় ছেলে শামসুর রহমান দুলালকে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন এবং চাচাতো ভাই আলতাফ হোসেন কেউ অত্র বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী হিসেবে নিয়োগ দেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ১৯৯৮ সালে সভাপতি হোসেন আলী মন্ডল তার বড় ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলম লোকমানকে কুট কৌশলে উক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। এর কিছুদিন পরে দলীয় ক্ষমতার বলে সভাপতি শাহ আলম লোকমান সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে তার আপন ভাই শামসুর রহমান দুলালকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ করান। এরপর ২০২৪ সালে শাহ আলম লোকমান মারা গেলে তার আপন ফুপাতো ভাই জবেদ মুহুরীকে সভাপতি বানান। এভাবেই তারা ভাই ভাই মিলে বিদ্যালয়টি আওয়ামী লীগের রাজনীতির দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগে তুলে ধরা হয়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান যিনি প্রধান শিক্ষক রয়েছেন শামসুর রহমান দুলাল সেই প্রতিষ্ঠানে তার ছোট ভাই পুরানাপৈল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন, আবার প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন প্রধান শিক্ষকের নিজ ভাতিজা মাশরুফ হোসেন মিরাজ, নৈশ্য প্রহরি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন প্রধান শিক্ষকের চাচাতো ভাই ফিরোজ হোসেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন প্রধান শিক্ষকের ভাগিনা নুর আলম ও আয়া পদে কর্মরত রয়েছেন চাচাতো বোন সোনিয়া আক্তার।
প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে এই মাসের পহেলা মার্চ শনিবার বেলা ১১ টায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে গ্রামের অর্ধশত মানুষ অংশ নেয়।
শ্যামপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা সুহেল রানা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে অনেক অনিয়ম দুর্নীতি রয়েছে, নিজের পরিবারের লোকজনকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন এই প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগ করতো সেই কারণে সে সময় আমরা মুখ খুলতে পারিনি, কিছু বলতেও পারিনি, বললেই আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিতো। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে এই শিক্ষকের বিচার চাই।
একই গ্রামের এনামুল বাবু বলেন, এই প্রধান শিক্ষক কয়েকটি নিয়োগ বাণিজ্য করে অর্থশোধ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের কোন উন্নয়ন করেননি তিনি, এমনকি তিনি স্কুলের গেটও বিক্রি করে খেয়েছেন, আমি চাই সে যদি অন্যায় করে তার শাস্তি হওয়া দরকার।
শ্যামপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহাব, সাখোয়াত হোসেন, আব্দুর রশিদসহ কয়েকজন বলেন, এই শ্যামপুর স্কুলটিকে আওয়ামী লীগের পরিবার তান্ত্রিক করে ফেলেছেন এই পর্যন্ত শিক্ষক। এখনো তারা আওয়ামী লীগের শাসনামলের মত এই প্রতিষ্ঠানটিকে পরিচালনা করছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
তারা বলেন, কিছুদিন আগেও এডহক কমিটির জন্য যে নাম পাঠানো হয়েছে তাও প্রধান শিক্ষকের নিজের পছন্দ মতো নাম পাঠিয়েছেন। তার অনেক অনিয়ম রয়েছে আমরা এ বিষয়ে অভিযোগও করেছি, আমরা চাই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হোক তদন্ত সাপেক্ষে আমরা তার শাস্তি দাবি করছি।
প্রতিষ্ঠানের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী দুজন শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বি ও রহমত আলী বলেন, আমাদের স্কুলের ফ্যান নষ্ট হয়ে থাকলে সেগুলো ঠিক করেন না, বাথরুম পরিষ্কার করেন না সবসময় নোংরা হয়ে থাকে যার ফলে পড়াশোনা করতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। তারা বলেন, ২০২৩ সালের শিক্ষার্থীরা স্কুলের একটি গেট বানিয়ে দিয়েছিলেন সেই গেটটিও বিক্রি করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। আমরা এগুলো সুষ্ঠু তদন্ত চাই, সেই সাথে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার বিষয়ে যে সব অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ঠিক না, যত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সবগুলো নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে, তারপর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে কতৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নিবেন আমি তা মাথা মেনে নিবো।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।