রিপন মারমা, রাঙ্গামাটি:
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম পাড়া এলাকায় আবারও বন্যহাতির ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে। রোববার (২৫ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাম্পান মাঝি মো. আবু তাহেরের বাড়িতে বন্যহাতির আক্রমণে বসতঘরসহ ঘরের আসবাবপত্র এবং গোলার ধান-চাল লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
স্থানীয়রা জানান, বন্যহাতিটি ব্যাঙছড়ি মুসলিম পাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে সরাসরি আবু তাহেরের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। প্রথমে বাড়ির পিছন দিক থেকে প্রবেশ করে সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়। এসময় ঘরবাড়ি, মাঠের ফসল, গাছের ফলমূলসহ প্রায় সব কিছুই ধ্বংস করে দেয়।
আবু তাহেরের স্ত্রী রহিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হঠাৎ হাতির ডাক শুনে বাইরে তাকিয়ে দেখি আমাদের বাড়ির চারপাশে হাতি। পেছনের দিক দিয়ে রুমে ঢুকে দরজা-জানালা ভেঙে দিয়ে সামনে দিয়ে চলে যায়। এখন আমাদের থাকার জায়গাটুকুও নেই। ঈদের আগে এই দুরবস্থায় কীভাবে চলব, কিছুই বুঝতে পারছি না।”
আবু তাহেরের ছেলে ওসমান গনি, চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জানান,
“বাবা সাম্পান চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান, আমাকে পড়াশোনা করান। এখন আমাদের ঘর নেই, সব কিছু শেষ। সামনে আমার পরীক্ষা, এই অবস্থায় মন দিয়ে কীভাবে পড়ব?”
স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন,
“আবু তাহের গরিব ঘাট মাঝি। ভাগ্যক্রমে পরিবারের সবাই বেঁচে গেলেও তাদের ঘরবাড়ি, চাল-আসবাব কিছুই রক্ষা পায়নি। আনুমানিক দুই লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।”
ঘটনার পর রাঙ্গামাটি দক্ষিণ বন বিভাগের কর্ণফুলী সদর রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক আবু কাউসার বাপ্পি জানান,
“সকালেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। রিপোর্ট করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন করলে বনবিভাগ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।”
এর আগেও কাপ্তাইয়ের সীতারঘাট মন্দির, কাপ্তাই পুলিশ সার্কেল অফিসের ব্যারাকসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। বনবিভাগের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, খাদ্যের অভাবে পাহাড় থেকে নেমে এসে লোকালয়ে হাতিরা আক্রমণ চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পাহাড়ি জনপদ কাপ্তাই ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বন্যহাতির উপদ্রব দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সঠিক পদক্ষেপের অভাবে তাদের জীবনে বারবার এমন দুর্যোগ নেমে আসছে। তারা অবিলম্বে স্থায়ী সমাধান ও ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।