দেওয়ান মাসুকুর রহমান :
“মহান মে দিবস হচ্ছে মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতিক। শতাব্দীপূর্ব শ্রমিকের সেই আন্দোলন সাফল্য ছিনিয়ে এনেছিল; প্রতিষ্ঠিত হয় ৮ ঘণ্টা শ্রমের সময় সীমা। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে মহান মে দিবস। পৃথিবীতে যতদিন শ্রমজীবি মানুষের অস্তিত্ব থাকবে, শ্রেণি শোষণ থাকবে ততদিন এই দিনটি মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের প্রতিক হিসেবেই পালিত হবে।”
“নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক, সাপ্তাহিক সবেতন ছুটি, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত কর; আপদকালীন নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দাও এবং সামাজিক বৈষম্যের অবসান চাই; ন্যুনতম বেতন কাঠামো ঘোষণা কর ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকারের নিশ্চয়তা চাই।”– এই শ্লোগান ও দাবীকে সামনে রেখে মহান মে দিবসের ১৩৯তম বার্ষিকী ও শ্রমজীবি মানুষের আন্তর্জাতিক সংহতি দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবি ও মেহনতী মানুষকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা দোকান কর্মচারী কল্যাণ ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)-এর প্রশিক্ষক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (১লা মে ২০২৫) সকাল ১০টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা দোকান কর্মচারী কল্যাণ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক নবচেতনার প্রতিনিধি আফজাল হোসেইনের সঞ্চালনায় শহরের ভানুগাছ রোডস্থ সংগঠনের কার্যালয়ের সম্মুখে এবং প্রধান প্রধান সড়কে র্যালী শেষে চৌমুহনা চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বক্তব্য দেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা দোকান কর্মচারী কল্যাণ ইউনিয়নের সভাপতি রনধীর চৌধুরী রঞ্জু’র সভাপতিত্বে র্যালীতে আরও অংশ নেন দৈনিক দেশ বুলেটিন পত্রিকার প্রতিনিধি কমরেড দেওয়ান মাসুকুর রহমান, মর্নিং পোস্ট পত্রিকার প্রতিনিধি ও গীতিকার পারভেজ হাসান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা দোকান কর্মচারী কল্যাণ ইউনিয়নের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. শামীম, দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক মো. শাহীন মিয়া, সংগঠনের সদস্য গৌতম পাল নিপুণ, চিনু লাল, রত্নময় পাল রাজু, মো. কবির মিয়া, হুমায়ুন মিয়া, কাঞ্চন এবং প্রায় ৪ হাজার কর্মচারীদের একমাত্র ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন শ্রীমঙ্গল উপজেলা দোকান কর্মচারী কল্যাণ ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক সদস্যসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান র্যালীপুর্ব সমাবেশে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন আত্মত্যাগী মে’ আন্দোলনের সংগঠক, নেতা-কর্মী ও শ্রমিকদের।
সমাবেশে কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “আন্তর্জাতিক শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে ১ মে এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম বিপ্লবী শপথে ঐক্যবদ্ধ ও প্রদীপ্ত হওয়ার দিন।
নতুন এক অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা সহ উন্নয়ন সমৃদ্ধি অগ্রযাত্রার স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি আর্থসামাজিক টেকসই কর্মসূচি প্রণয়ন ও দ্রুত বাস্তবায়নের রোডম্যাপসহ বৈষম্যহীন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের নতুন এক দায় নিয়ে উপস্থিত হয়েছে এবারের মে দিবস। শ্রমিক শ্রেণি ও সকল স্তরের জনগণসহ রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনের স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে যথাযথ ভূমিকা পালন প্রত্যাশিত।
অনেক ত্যাগ, রক্ত, সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায় ৮ ঘন্টা শ্রম দিবসের দাবী। কিন্তু এর মধ্যে তা সীমাবদ্ধ ছিল না, এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না, এটা হচ্ছে শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির লক্ষ্যে মজুরী দাসত্ব ব্যবস্থা তথা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উচ্ছেদ করে বৈষম্যহীন আর্থসামাজিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠায় মহান সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
মে দিবসের বৈপ্লবিক তাৎপর্য তুলে ধরে মহামতি কমরেড কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “শুধু ৮ ঘন্টা শ্রমদিবসের জন্য মে দিবসের সমাবেশ নয়, তাকে অবশ্যই সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্রেণি বৈষম্য নিরসন করার নিমিত্তে দোকান কর্মচারীদের দৃঢ় সংকল্প গ্রহণের সমাবেশে পরিণত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “মে দিবসের বিপ্লবী তাৎপর্য ও শিক্ষা তাই আজও অম্লান। এই শিক্ষাকে সামনে রেখে অর্জিত অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে আজ আমাদের অগ্রসর হতে হবে। শ্রমিকশ্রেণীর ধারাবাহিক সংগ্রামের ফলে মে দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়ে দেশে দেশে প্রতি বছর পালিত হচ্ছে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা দোকান কর্মচারী কল্যাণ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক নবচেতনার প্রতিনিধি আফজাল হোসেইন বলেন, “১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবসের দাবীতে শ্রমজীবী মানুষের যে অগ্নিঝরা সংগ্রাম রচিত হয়েছিল, তারধারা এখনো বিদ্যমান। শ্রমিক শ্রেণি সহ দোকান-কর্মচারীরা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার ক্রমাগত আক্রমণের মুখে। নিয়োগ পত্র, পরিচয় পত্র, সার্ভিস বুক, সাপ্তাহিক ছুটি, উৎসব ছুটি সহ অন্যান্য আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকারের নিশ্চয়তা নেই। বেঁচে থাকার জন্য মর্যাদাপূর্ণ নিম্নতম মজুরী বা বেতন কাঠামোও নির্ধারিত হয়নি। নিজ শ্রেণি স্বার্থ রক্ষায় দোকান কর্মচারীসহ শ্রমিক শ্রেণিকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। আসুন মহান মে দিবসের চেতনায় শানিত হয়ে সেই সংগ্রামের পথে নিয়োজিত হই।”