রাজু রহমান, যশোর জেলা প্রতিনিধি:
যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া-কায়বা সড়কটি এখন যেন এক মরণফাঁদ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন পড়ে থাকা এ সড়কটির বিভিন্ন অংশে কার্পেটিং উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত, কোথাও কোথাও একেবারে কাদা-পানিতে ডুবে আছে রাস্তাটি। ফলে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজারো মানুষ।
শার্শা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরার চন্দনপুর ইউনিয়নের মানুষদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক। সড়কের এমন বেহাল অবস্থার কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। যান চলাচল কখনো থেমে যাচ্ছে, কখনো ঘটছে বিপজ্জনক দুর্ঘটনা।
প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে: এলজিইডি
শার্শা উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সড়কটির উন্নয়নের জন্য আমরা প্রকল্প প্রস্তাবনা (মাফ) তৈরি করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে ৪৩৫ মিটার দীর্ঘ একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
জমে থাকা পানি, ডুবে থাকা রাস্তা
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগআঁচড়া বাজার থেকে কবরস্থান, রাড়িপুকুর বটতলা হয়ে কায়বা ইউনিয়ন পরিষদ এবং বাদামতলা বাজার থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত প্রায় পুরো সড়কজুড়ে খানা-খন্দে ভরা। বর্ষাকালে এসব গর্তে জমে থাকা পানি সড়কটিকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে। অনেক স্থানে রাস্তার একাংশ কাদা-পানিতে ডুবে থাকে।
নানাবিধ বিপদের মুখে জনজীবন
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও রোগীবাহী যানবাহন। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে পৌঁছানো যেন যুদ্ধ জয় করার মতো।
সড়কটির দুই পাশে অন্তত ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৫টি বাজার রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- বাগআঁচড়া সিদ্দিকিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা
- ড. আফিলউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ
- দিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- চালিতাবড়িয়া আরডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- বাইকোলা ওসমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা
- পাঁচ কায়বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- পাড়ের কায়বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
জনমতের প্রতিফলন:
- আবদুল কাদের, সহকারী শিক্ষক, কায়বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়:
“ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন ভাঙা রাস্তা পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসে। অনেকেই সময়মতো পৌঁছাতে পারে না।” - আবু হুরায়রা, শিক্ষার্থী, আফিলউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ:
“রোজ এই রাস্তায় যাতায়াত করতে গিয়ে আমাদের শরীরে ব্যথা হয়ে যায়। পড়াশোনায় মনোযোগ রাখা কঠিন।” - শহিদুল ইসলাম, বাদামতলা বাজারের বাসিন্দা:
“সড়কের মাঝখানে এত বড় গর্ত—দেখলে মনে হয় মাছ চাষ করা যায়।” - একজন ব্যাংক কর্মকর্তা:
“প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। রোগীদের হাসপাতালে নিতে গেলে কষ্টে পড়ে যাই। আমি নিজেও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি।” - আব্দুল্লাহ, ব্যবসায়ী, বাগআঁচড়া বাজার:
“পিকআপ আসে না, ট্রাক আসলে বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। ব্যবসা বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা।” - ছামিরুল, ট্রাকচালক:
“চাকা তো গেছে, এখন মাজারও যাচ্ছে। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।” - ইজিবাইক ও ভ্যান চালকেরা বলেন:
“সারাদিন আয় করে সন্ধ্যায় খরচ চলে যায় গাড়ি সারাতে।”
ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
স্থানীয়দের দাবি, রাস্তায় চলাচলরত মাটিবাহী ট্রাক ও ড্রামট্রাকগুলোর জন্য সড়কটি দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। বর্ষায় কাদা ও শুষ্ক মৌসুমে ধুলা—দুই সময়েই জনগণ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। জরুরি পরিবহন, রোগী পরিবহন, শিশুদের যাতায়াত—সবকিছুই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তাদের একটাই দাবি—“এই সড়ক দ্রুত সংস্কার করতে হবে।” তা না হলে এই অঞ্চলের জীবনযাত্রা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ব্যবসা—সবই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।