বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ৮ বছরের শিশু ধর্ষণ চেষ্টার মূল আসামী সাজ্জত(৬০) ইবি থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে।
গতকাল দুপুরে ইবি থানা পুলিশের বিশেষ একটি টিম ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ ও সাব ইন্সপেক্টর রাকিবুজামান রাকিবে নেতৃত্বে মূল আসামীকে হরিনারায়ণপুর থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
মূল আসামী সাজ্জত কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
গত ১০ই মার্চ সাজ্জত তার প্রতিবেশী ৮ বছরের এক শিশুকে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে।
ঘটনার প্রায় ৪ দিন পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় সাজ্জতের নামে একটি ধর্ষণের চেষ্টা মামলা রুজু হয়। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার ইবি থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম গোপন সংবাদের ভিত্তি থেকে ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মেহেদী হাসান ও সাব- ইন্সপেক্টর মোঃ রাকিবুজামান রাকিবের নেতৃত্বে মূল আসামী সাজ্জতকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবিথানাধীন হরিনারায়ণপুর থেকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এর আগে সাজ্জতের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার হরিনারায়নপুরে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। গত ১১ তারিখে ঘটনাটি ঘটার ১দিন পর হতে অভিযুক্ত দোকানী সাজ্জত (৬০) পলাতক থাকে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টায় একটি মহল দৌড়ঝাঁপ শুরু করে।
তবে এধরনের ঘটনা সমঝোতা করলে অথবা ধামাচাপা দিলে আরো অনেক আছিয়াকে মানুষরূপী শকুনের অত্যাচারে অকালে প্রাণ দিতে হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। তারা এ ধরনের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
পুলিশ বলছে, ঘটনা সম্পর্কে জানার পর থেকেই পলাতক সাগজতকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া একাধিকবার ভুক্তভোগী পরিবারকে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করার জন্য বলা হলেও এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন অভিযোগ দায়ের করেননি তারা। যদিও একটি পক্ষ দাবি করছে, পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার যৌথ চেষ্টায় অর্থের বিনিময়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ধামাচাপা পরতে চলেছে।
ভুক্তভোগী শিশুর মা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তার ৮ বছরের কন্যা শিশু পার্শ্ববর্তী সাগজতের দোকানে যায়। সেসময় তার ঐ মেয়ের সাথে তার ৮ মাস বয়সী আরেকটা মেয়েও ছিল। তাকে কোলে নিয়ে দোকানের সামনে গেলে সাগজত তাকে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে দোকানের মধ্যে ঢেকে নেয়। এরপর ভুক্তভোগী শিশুর কোলে থাকা শিশুকে খাঠের উপর বসিয়ে রাখতে বলেন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুটির প্যান্ট খুলে তার স্পর্শকাতর অঙ্গে একাধিকবার স্পর্শ করতে থাকে। শিশুটি বাড়িতে এসে তাকে বিষয়টি জানালে তিনি তার শাশুড়িসহ পাড়া প্রতিবেশী বেশ কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে সাগজতের দোকানে যান। তার কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। সেসময় সকলে মিলে তাকে গালিগালাজ দিয়ে পার্শ্ববর্তী এক আপার বাড়িতে যান। সেই আপাকে দিয়ে স্থানীয় ক্যাম্প আইসিকে ফোন দেওয়া হলে ক্যাম্প আইসি তাদেরকে থানায় ও হাসপাতালে যেতে বলেন। এই সব জায়গায় গেলে
অনেক টাকা খরচ হবে ভেবে তারা আর যাননি। সবশেষ তিনি বলেন- আমরা গরীব মানুষ টাকা কোথায় পাবো।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, এই সাগজতের বিরুদ্ধে এর আগেও এধরনের অভিযোগ রয়েছে। সেই বার ভুক্তভোগী মেয়েটির বছর ১৪/১৫ বছরের কাছাকাছি হওয়ায় তার দরিদ্র পরিবার লোক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বাধ্য হয়। এবার ঘটনাটি জানাজানি হলেও এক শ্রেণীর নেতাদের চাপে এ ঘটনাটিও ধামাচাপা পরতে বসেছে। ঐসব নেতাদের সাথে
পুলিশের সখ্যতা রয়েছে। ঘটনার পর ঐ শিশুর বাবা অভিযুক্ত সাগজতের কাছে গেলে সাগজত ভুল স্বীকার করে মাপ চান। সেসময় মাপ চাইলেও তাকে কয়েকটা ঘুষি মারে শিশুটির বাবা। ঐসময় দ্বীন ইসলাম ওরফে লাল্টু নামের এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল যোগে তাকে নিয়ে চলে আসেন। শুনেছি সাগজতকে নিয়ে চলে আসার পর থেকে ৫/৬ ঘন্টা তিনিও এলাকায় ছিলেন না।
ভুক্তভোগী শিশুটি জানায়, সাগজত বিস্কুটের লোভদেখিয়ে দোকানের ভেতরে নিয়ে প্যান্ট খুলে একাধিকবার স্পর্শকাতর অঙ্গ স্পর্শ করতে থাকে।
ঐ শিশুর বাবা বলেন, ঘটনার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। বাড়ি আসলে আমার স্ত্রী ঘটনাটি আমাকে জানায়। রাত অনেক হওয়ায় পরদিন সকালে আমি সাগজত এর দোকানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই। তিনি ভুল স্বীকার করে মাপ চাওয়ার পর রাগান্বিত হয়ে তাকে ২/৩ টা ঘুষি মারি। তখন আশপাশের লোকজন এসে ঠেকায় দেয়। পরবর্তীতে একজন এসে মোটরসাইকেলে করে তাকে নিয়ে যান এবং যাওয়ার সময় বলেন, আমি নিয়ে যাচ্ছি আবার সন্ধ্যার সময় সাথে করে নিয়ে এসে বিচার করবোনে। আমার কোন বিচার করে নাই। আমি গরীব বলে সবাই পাশ কেটে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, যে এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে তার এই দুনিয়ায় পর বাঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। এটটু ফোঁটা নাবালকের সাথে যে এই কাজ করতে পারে সে মানুষের মধ্যেই পরে না। আমি গরীব মানুষ, আমি এর বিচার চাই।
ঐ শিশুর দাদা জানান, ঘটনার পর ওর (সাজ্জত) ভাই সকল আমাদের কাছে এসে পা-হাত-পা ধরে মাপ চাচ্ছে। কিন্তু মাপ পাওয়ার যোগ্য ওরা না। ওরা কুকুরের থেকেও অধম। ওদের মৃত্যুই ভালো।
গ্রেফতারের বিষয়ে ইবি থানার সাব ইন্সপেক্টর রাকিবুজামান রাকিবের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল হওয়ার পর থেকেই তাকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত ছিল পরবর্তীতে গোপন সংবাদের ভিত্তি থেকে হরিনারায়ণপুর থেকেই তাকে গ্রেফতার করি।
সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তিনি ঝিনাইদহে ছিলেন পরবর্তীতে তিনি ইবি থানা এলাকায় প্রবেশ করলে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত পূর্বক চার্জশিট করে আদালতে প্রেরণ করা হবে।