শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ঐতিহ্যবাহী একটা বাড়ির মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের সূত্র ধরে তা রক্ষণাবেক্ষণে আদালত কর্তৃক রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই বাড়ির স্থাবর ও অস্থাবর সব সম্পত্তি সীল গালা করে নিজ আয়ত্বে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। রোববার (৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত শহরের শহীদ তুলশীরাম সড়কে এই কার্যক্রম পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. নুর ই আলম সিদ্দিকী।
শহীদ তুলশীরাম সড়কের উভয় পাশে প্রায় ১০৩ শতক জমির পৈত্রিক সূত্রে মালিক ছিলেন বানী চাঁদ আগারওয়ালা। সেই ব্রিটিশ আমলেই তার পূর্ব পুরুষরা ভারত থেকে এখানে এসে বসত গড়েন। এই মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী পরিবারটি সে কারণে এই শহরের গোড়াপত্তনের স্বাক্ষী হিসেবে অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী। উল্লেখিত সম্পত্তির উপর সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত পুরনো আমলের একটা বাড়ি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় বানী চাঁদ আগারওয়ালার ওয়ারিশ ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে।
সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমিত কুমার আগারওয়ালা নিক্কি বলেন, ওই বাড়িতে আমার জন্ম। আমাদের পারিবারিক ব্যবসার গদিঘর ছিল এই ভবনেই। সম্প্রতি শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলতফ হোসেন দাবী করছেন বাড়িটি তিনি আমার কাকা ভারতীয় নাগরিক প্রদীপ কুমার আগারওয়ালার কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। কিন্তু কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
এমতাবস্থায় গত মার্চ মাসে তিনি সন্ত্রাসী কায়দায় দলবলসহ হামলা চালিয়ে আমাদের ওই বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে জোরপূর্বক দখল করেন। এতে প্রতিবাদ জানানোয় তার সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আমার ভাই ও ছেলেকে আহত করে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে এসে বাড়িটিতে তালা দিয়ে নিজেদের কাছে চাবি রাখে এবং উভয় পক্ষকে বিরোধ নিষ্পত্তির পরামর্শ দেয়। কিন্তু ব্যবসায়ী আলতাফ সমঝোতায় না এসে উল্টো মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করে এবং সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যে প্রোপাগান্ডা করে আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালায়।
এতে বাধ্য হয়ে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়ে আদালতে মামলা করি। এতে তিনি আবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আমি কিনিনি তবে প্রদীপ কুমার আগারওয়ালা পাওয়ার অফ এটর্নির বলে তার প্রতিনিধি এ্যাডভোকেট তুষার কান্তি রায়ের ছেলে হিমেল কুমার রায়ের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি। সেকারণে সেখানে থাকা আমার মালমাল রক্ষার্থে ওই বাড়ি তথা দ্বিতল ভবন দখলে নিয়েছিলাম। তার এই কথা সম্পূর্ণ মিথ্যে। ভাড়া নেয়ার নামে তিনি মূলত: ভূয়া কাগজ তৈরী করে বাড়িটি জবরদখল করতে চেয়েছে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, সুমিত কুমার আগারওয়ালার মামলার প্রেক্ষিতে এই বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালত ঐতিহ্যবাহী ওই বাড়ি ও সেখানে রক্ষিত মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে রিসিভার নিয়োগ করে ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে মালামাল তথা অস্থাবর সম্পত্তির সিজার লিস্ট করে পুরো ভবন সিলগালা করে লাল পতাকা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে আদালতের রায়ের বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
এব্যাপারে বিউটি সাইকেল স্টোরের মালিক ও সৈয়দপুর উপজেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, আমি নিয়ম মাফিক ভবনটি ভাড়া নিয়ে মালামাল রেখেছি। হঠাৎ বিএনপি নেতা সুমিত কুমার আগারওয়ালা নিক্কি এসে ওই বাড়িতে তাদের অংশ আছে দাবি করে তাকে ভাড়া প্রদানের কথা বলে। এতে সম্মত না হওয়ায় রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে বাড়িটি জোরপূর্বক দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। বাধা দেয়ায় হামলা ও ভাঙ্চুর চালায় এবং মালামাল লুট করে। অথচ পুলিশ একতরফাভাবে নিক্কির কথায় তালা লাগিয়ে চাবি নিজেদের কাছে রাখে।
এখন আবার আদালতের নির্দেশের দোহাই দিয়ে সেই তালা ভেঙে ঢুকে সিজার লিস্টের নামে মালামাল তছনছ করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমি আইনের আশ্রয় নিবো। সেই সাথে মালামাল সহ বাড়ি ক্রোক করার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবো।
এঘটনায় সৈয়দপুরে দিনভর ব্যাপক চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষসহ সচেতন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।