শাব্বির এলাহী, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে স্কুল শিক্ষিকা রোজিনা বেগম (৩২) কে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। একই ঘটনায় নারীসহ আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনার প্রধান আসামি রেজাউল করিম সাগর এখনও পলাতক। তাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
নৃশংস এই হামলার ঘটনা ঘটে ২৬ মে, সোমবার সকাল ১১টার দিকে কমলগঞ্জ উপজেলার ভাসানীগাঁও গ্রামে।
নিহত রোজিনা বেগম ভাসানীগাঁও নবদূত পাঠশালা (কেজি) স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক এবং গ্রামের প্রয়াত নিজাম উদ্দিনের কনিষ্ঠ কন্যা। তাঁর একটি ১১ বছর বয়সী সন্তান রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ওইদিন সকালে আব্দুর রহিম ভেকু মেশিন দিয়ে বিরোধপূর্ণ কৃষিজমির মাটি কাটছিলেন। খবর পেয়ে রোজিনার বোনজামাই জালাল মিয়া সেখানে গিয়ে বাধা দিলে প্রতিপক্ষরা দা দিয়ে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।
পরবর্তীতে তাকে রক্ষায় ছুটে যান হারুন মিয়া, তার স্ত্রী নুরুন নাহার লুবনা এবং রোজিনা বেগম। প্রতিপক্ষ আব্দুর রহিম, তার ছেলে রেজাউল করিম সাগর, মনির মিয়া, মামা আজিবুর রহমান ও আবুল হোসেন মিলে দা ও বল্লম দিয়ে চারজনকেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোজিনাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি আহতদের মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনার পর পরই পুলিশ আব্দুর রহিমসহ তিনজনকে আটক করে। ওই রাতেই নিহত রোজিনার বড় ভাই শাহজাহান আহমদ কমলগঞ্জ থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে বুধবার গভীর রাতে পুলিশ বনগাঁও থেকে গ্রামবাসীর সহায়তায় আজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
তবে প্রধান অভিযুক্ত রেজাউল করিম সাগর এখনও পলাতক। এতে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
২৭ মে জানাজার আগে স্থানীয় মসজিদের ইমাম খায়রুল ইসলাম, শিক্ষক মোশাহিদ আহমদ, রাজনৈতিক নেতা মামুনুর রশীদ, আইনজীবী কামরুল ইসলামসহ এলাকাবাসী পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন—
“চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাগর ও তার পিতা আব্দুর রহিম নেতৃত্বে একজন শিক্ষিকাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) শামীম আকনজি জানান, “ঘটনার পরপরই তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার রাতে গ্রামবাসীর সহায়তায় আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রধান আসামি সাগরকে গ্রেফতারে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”