লায়ন উজ্জল কান্তি বড়ুয়া
আজ মহান বুদ্ধ পূর্ণিমা—বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ২৫৬৯ বুদ্ধাব্দে পালিত এই মহোৎসব দিনটি একই সঙ্গে গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিজ্ঞান লাভ এবং মহাপরিনির্বাণের স্মৃতিবাহী দিন।
প্রায় ২৬৪৯ বছর আগে, নেপালের লুম্বিনী কাননে রাজা শুদ্ধোদন ও রানি মহামায়ার কোলজুড়ে জন্ম নেন এক অসাধারণ পারমীবান সত্ত্ব—সিদ্ধার্থ। পরবর্তীতে যিনি গৌতম বুদ্ধ নামে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হন। উনত্রিশ বছর বয়সে রাজপ্রাসাদের সুখ-সুবিধা ও মোহ ত্যাগ করে তিনি বেরিয়ে পড়েন মানবজীবনের চরম সত্যের অনুসন্ধানে। দীর্ঘ ছয় বছরের সাধনা শেষে গয়ার বোধিবৃক্ষতলে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতেই বোধিজ্ঞান লাভ করেন তিনি। সেই থেকে তিনি হলেন—বুদ্ধ, অর্থাৎ ‘জাগ্রত’। পরবর্তী ৪৫ বছর তিনি মানবজাতির কল্যাণে তাঁর বাণী ও জ্ঞান প্রচার করে অবশেষে একই বৈশাখী পূর্ণিমায় কুশিনগরে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এই কারণেই বুদ্ধ পূর্ণিমা—তিনটি মহান ঘটনার একত্র দিনে সংঘটিত একটি বিরল দিবস—বিশ্বের বৌদ্ধদের কাছে পরম শ্রদ্ধা, পবিত্রতা ও অনুপ্রেরণার প্রতীক।
বুদ্ধ ছিলেন মানবতা, শান্তি ও মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। জাতিসংঘ ১৯৯৯ সালে বুদ্ধ পূর্ণিমাকে ‘ভেসাক ডে’ বা ‘বৈশাখী দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকেই জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করা হয়। বিভিন্ন পত্রিকা, রেডিও ও টেলিভিশনে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রকাশ ও সম্প্রচার করা হয় বিশেষ আয়োজন।
গৌতম বুদ্ধ মানুষকে ধর্ম, জাতি, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে কেবল মানুষ হিসেবে দেখেছেন। তাঁর প্রচারিত ধর্মের মূলমন্ত্র—“সব প্রাণী সুখী হোক”। মানবজীবনের দুঃখ, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তিনি আবিষ্কার করেন চারি আর্যসত্য ও আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ—যা একজন মানুষকে সহজ-সরল পথে, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নির্বাণ বা পরম শান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে। আষাঢ়ী পূর্ণিমায় সারনাথে প্রথম ধর্মদেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর বিশ্বজয়ী ধর্মযাত্রা।
বুদ্ধের শিক্ষা আজও সমান প্রাসঙ্গিক—সংযম, সহনশীলতা, দয়ার সঙ্গে যুক্তির উপর ভিত্তি করে একটি মানবিক সমাজ গঠনের দর্শন। তাঁর ত্রিপিটক ধর্মগ্রন্থটি এখন বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত—বাংলাতেও। এই শিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা নিজের ভিতর আলোর জন্ম দিতে পারি, সমাজ ও জগতকে দিতে পারি শান্তির বার্তা।
আসুন, বুদ্ধের অহিংসা, মৈত্রী ও করুণার বাণীতে উজ্জীবিত হই। বুদ্ধের বাণী প্রচারে সক্রিয় হই। এই শুভ দিনে আমাদের প্রার্থনা—জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক, সকল প্রাণী সুখী হোক।
শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা।