মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি:
যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানাধীন বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে এক স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মৃতরা হলেন মনিরুজ্জামান (৫২) ও তার স্ত্রী রেহেনা খাতুন (৪৫)। তাদের মরদেহ যথাক্রমে বাড়ির উঠোনে গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় ও বাড়ির পাশের মাঠে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
গত ১৪ জুন (শুক্রবার) ভোরে গ্রামবাসীরা প্রথমে মনিরুজ্জামানের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির উত্তর পাশের মাঠে তার স্ত্রী রেহেনার নিথর দেহ পাওয়া যায়। তাদের মৃত্যুকে ঘিরে এলাকাজুড়ে রহস্য ও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
চোখে পড়ছে অস্বাভাবিকতা
স্থানীয়রা জানান, মনিরুজ্জামানের মরদেহ হাটু গেঁড়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল, যা আত্মহত্যার সাধারণ চিত্র নয়। তার পিঠে মাটি লেগে থাকার কারণে ধারণা করা হচ্ছে, মরদেহটি বাইরে কোথাও থেকে টেনে এনে ঝুলিয়ে রাখা হতে পারে। এতে অনেকের ধারণা, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
পরিবারের অভিযোগ: পরিকল্পিত হত্যা
মৃত দম্পতির মেয়ে মনিরা (৩০) ও ছেলে মাসুদ (১৮) দাবি করেন, তাদের বাবা-মা আত্মহত্যা করেননি। পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে। দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।
পিবিআইসহ একাধিক তদন্তকারী দল মাঠে
ঘটনার পরপরই বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ, পিবিআই যশোর এবং আরও কয়েকটি তদন্তকারী ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করে। মরদেহ দুটি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাসেল মিয়া বলেন,
“ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা—তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।”
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এসআই রাশেদুল ইসলাম জানান,
“মনিরুজ্জামানের মরদেহ বাড়ির উঠোনে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং স্ত্রী রেহেনার মরদেহ বাড়ির পাশে মাঠে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিষয়টি সন্দেহজনক, তদন্ত চলমান।”
স্থানীয়দের মতে, পারিবারিক কলহ ছিল
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দম্পতির মধ্যে পারিবারিক কলহের বিষয়টি আগে থেকেই ছিল। তবে সেটি এমন রহস্যময় মৃত্যুর কারণ কিনা—তা তদন্তেই স্পষ্ট হবে।
উপসংহার:
রঘুনাথপুর গ্রামে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা এখনো রহস্যে মোড়া। এটি কি আত্মহত্যা, না কি ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড—তা নির্ধারণের অপেক্ষায় স্থানীয়রা। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত উত্তরের অপেক্ষায় গোটা এলাকা।