অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরে ৮ বছর বয়সী এক মাদরাসা ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত ছাত্র সানিম হোসাইন (৮) লক্ষ্মীপুর আল মুঈন ইসলামি একাডেমির হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক হাফেজ মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, অধ্যক্ষ মাওলানা বশির আহমেদ এবং ফয়সাল নামে আরও একজনকে। ঘটনার পর আটক মাহমুদকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ঘটনা কী?
মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে রহস্যজনকভাবে সানিমের মৃত্যু হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সদর উপজেলার উত্তর তেমুহনী এলাকায় মাদরাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত সানিম লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির মাতব্বরের ছেলে। সে ২০ পারা কোরআনে হাফেজ ছিল।
ঘটনার পর রাতেই সানিমের বাবা হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরিবারের অভিযোগ
সানিমের পরিবারের দাবি, ঘটনার ৩-৪ দিন আগে তাদের জানানো হয়, সানিম ‘হুজুরের কথা শোনে না’ এবং ‘হুজুরের নামে বদনাম করে’। এতে হুজুর তার ওপর ক্ষুব্ধ হন।
পরিবারের ভাষ্য, মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ খবর আসে যে, সানিম টয়লেটে ঢুকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তারা এসে দেখে, মরদেহ টয়লেটে নয়, বরং মাদরাসার নিচতলার একটি কক্ষে বিছানার ওপর রাখা। এতে সন্দেহ জাগে এবং তারা অভিযোগ করেন যে সানিমকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
অধ্যক্ষ বশির আহমেদ বলেন, “নামাজ ও খাওয়ার বিরতির সময় সানিম নিখোঁজ ছিল। পরে সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, সে গামছা হাতে নিয়ে টয়লেটে ঢুকেছে। সেখান থেকেই তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।”
তবে প্রশ্ন উঠেছে, সিসি ক্যামেরায় দেখা গেলেও তার টয়লেট থেকে বের হওয়ার কোনো দৃশ্য পাওয়া যায়নি। শিক্ষকরা দাবি করেছেন, তারা সানিমের মরদেহ টয়লেট থেকে নিচে নামিয়েছেন, কিন্তু সেই দৃশ্যের কোনো ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
পুলিশের অবস্থান
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোন্নাফ বলেন, “সানিমকে হত্যার অভিযোগে তার বাবা মামলা করেছেন। একজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
পরিবারের দাবি
নিহত সানিমের বাবা হুমায়ুন কবির বলেন, “আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”