শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী প্রতিনিধি:
কুরবানিকে সামনে রেখে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার রবিউল ইসলামের দুম্বার খামার স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মরু অঞ্চলের এই ব্যতিক্রমধর্মী প্রাণীকে ঘিরে খামারটি এখন দর্শনার্থী ও সম্ভাব্য ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর। যদিও এখনো পুরো দমে বিক্রি শুরু হয়নি, তবে রবিউলের আশা—ঈদের আগেই সব দুম্বা বিক্রি হয়ে যাবে।
উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কাথারিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ২০২২ সালে এই খামারের সূচনা করেন। তার ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম সৌদি আরবে কর্মরত। ২০২২ সালে দেশে ফেরার সময় তিনি দুটি দুম্বা সঙ্গে করে আনেন। শুরুতে জলবায়ুতে মানিয়ে নিতে কিছুটা সমস্যা হলেও এক মাসের মধ্যেই প্রাণীগুলো স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়।
পরবর্তীতে সৌদি আরব থেকে আরও ছয়টি দুম্বা এনে রবিউল ধীরে ধীরে তার খামারটি বড় করেন। বর্তমানে তার খামারে ২৬টি দুম্বা রয়েছে। এর মধ্যে একটি ইতোমধ্যে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবং ঢাকার একজন ব্যবসায়ী আরও পাঁচটি দুম্বার অর্ডার দিয়েছেন।
দম্বাগুলোর ওজন ৫০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। অধিকাংশই সাদা রঙের এবং খাদ্যতালিকায় রয়েছে কচি ঘাস, ভুট্টা, ভুসি ও চোকর। তারা তুলনামূলকভাবে কম পানি পান করে। প্রতিদিন দুপুরের পর রবিউল খামার থেকে মাঠে নিয়ে চরাতে যান প্রাণীগুলোকে।
খামারে গিয়ে দেখা যায়, দুম্বাগুলো সুস্থ ও সচল। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক দর্শনার্থী আসছেন। এক দর্শনার্থী জাহাঙ্গীর বলেন, “মরুর প্রাণী দুম্বা কীভাবে আমাদের জলবায়ুতে মানিয়ে নিয়েছে, তা দেখতে এসেছি। এবার কোরবানিতে দুম্বা দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।”
এদিকে, খামার দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “প্রতিদিন এসে খামার দেখছি। নিজের খামার দেওয়ার স্বপ্ন দেখছি। রবিউল ভাই অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন, সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম জানান, “এটি নীলফামারীর একমাত্র দুম্বার খামার। আমি নিজে খামারটি পরিদর্শন করেছি। এটি একটি সময়োপযোগী ও সম্ভাবনাময় উদ্যোগ। তুর্কি জাতের এই দুম্বাগুলো এলাকায় ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে। খামারিকে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে।”
আগামী শুক্রবার ও মঙ্গলবার ঢেলাপীর হাটে এই দুম্বাগুলো তোলা হবে বলে জানিয়েছেন রবিউল। তিনি আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, “আশা করি, ঈদের আগেই সব দুম্বা বিক্রি হয়ে যাবে।”