রাজু রহমান যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ
পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের কোন প্রভাব পড়ছে না বাজারে।বাজারে মূল্য তালিকার বোর্ড থাকলেও তাতে লেখা নেই কোন দ্রব্যের মূল্য। সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দেদারছে চড়া মূল্যে ব্যবসা করছে ব্যবসায়ীরা। এতে চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, অনেকের পক্ষে সংসারের খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি প্রতিটা সংসারে লেগেছে বড় ধাক্কা আয়ের সাথে তাই মিলছে না ব্যয়ের হিসাব। সে কারণেই ছোট হয়ে আসছে বাজারে তালিকা।
শার্শা থানার ছোট বড় কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে স্বল্প আয়ের মানুষ গুলোর বাজার করা চিত্র। কেউ বাজারে ব্যাগ হাতে এদিক সেদিক ঘুরছে, কেউবা প্রয়োজনের অর্ধেক বাজার করেই বাসায় ফিরছে।বাজারে সবজি, মাছ, ডিম, মাংস, চাল, ডাল, তেল, আঠা ময়দা ও ফলের প্রচুর সরবরাহ থাকলেও দামে তার কোন প্রভাব ফেলছে না।
মাছের বাজারে দেখা গেছে প্রতি কেজি পাঙ্গাস ১৭০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পুটি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সিলভার কাপ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, কৈ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, মাগুর ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, জিওল ৮৫০ থেকে ১২০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
মাংস বাজারে চিত্র যেন আরো ভয়াবহ। খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, দেশি মুরগি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, সোনালি মুরগি কেজি ৪৭০ টাকা, ব্রয়লার কেজি ৪৭০ টাকা, পোল্টি কেজি ৩২০ টাকা। মাংস কিনতে আসা জসিম হাওলাদার নামের একজন ক্রেতা জানান, সিন্ডিকেটের কারণেই মাংস বাজার এমন চড়া। সাধারণ মানুষ মাংস কিনতে এসে অনেকেই ফিরে যাচ্ছে। প্রশাসন তৎপর হলে সিন্ডিকেট থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি পাবে।
ডিমের দামেও এসেছে পরিবর্তন প্রতি পিস সাড়ে ১০ টাকা থেকে ১১টাকা।কিন্তু কোন রকমে কাটেনি সবজি বাজারের অস্থিরতা।রমজানের আগের ৩০ টাকা কেজির বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা, ডাটা ২৫ টাকা, সজনে ১৫০ টাকা, কলা ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা,ঢেঁড়স ৭০ টাকা, কাঁচা ঝাল ৬০ টাকা, পিঁয়াজ ৪০ টাকা, রসুন ১৩০ থেকে ২০০ টাকা, আদা ৩০০ টাকা, আলু ৩০ টাকা,মিষ্টি আলু ৫০ টাকা,শশা/ খিরা ৮০ থেকে ১১০ টাকা।
নাভারন সবজি বাজারের সভাপতি মোঃ আলাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আঃ ছালাম,মাছ বাজারের সভাপতি সোহবাব হোসেন মিন্টু ও সম্পাদক ইসমাইল হোসেন শান্তি জানান, বাজারে সবজি ও মাছের আমদানি বেশি হলে দাম কিছুটা কমে কিন্তু আমদানি কম হলে দাম বাড়ে।
বাজার সিন্ডিকেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, সিন্ডিকেট ছাড়া কোন বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ানো বা কমানো এটা হয় না। সবজি ক্রেতা ভ্যান চালক মিলন হোসেন,কৃষক মঈদুল ইসলাম,চাকুরীজীবি হারুন অর রশিদ বলেন,বাজারে পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহ থাকলেও দাম যেন আকাশচুম্বী যা আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। মাছ বাজারের ক্রেতাদের কন্ঠে একই সুর। বাজাবে প্রশাসনের নজরদারি একান্ত প্রয়োজন।
বাজারে চাল ৬০ খেকে ১৩০ টাকা, আটা ৫৫ টাকা, ময়দা ৭৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৫০ টাকা, মাঝারি মসুর ডাল ১১০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, ছোলার ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, চিনি ১৪০ টাকা, খেজুর ৩০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ফল বাজারে প্রতি কেজি আপেল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, কমলা ৩০০ টাকা, মালটা ৩২০ টাকা, আঙ্গুর ৩০০ টাকা, কলা ৮০ টাকা থেকে ১১০, কেজি পেয়ারা ৭০ টাকা,তরমুজ ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি,আনারস ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শার্শার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণে ক্রেতারা প্রয়োজন মত কেনাকাটা করতে পারছে না কাজেই আমাদের বেচা- বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। একটা নিয়ম নীতির মধ্যে দ্রব্যমূল্যে রাখতে পারলে ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দে ক্রয় করতে পারতেন।রমজান আসলে জিনিসের দাম কেন বাড়ে এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ীরা জানান, বিক্রি টা আমাদের ক্রয়ের উপর নির্ভর করে সেখানে আমাদের কোন হাত নেই।
ভুক্তভোগী ক্রেতারা বলেন, জিনিসের দাম আকাশচুম্বী হাওয়াই আমরা দিশেহারা। কোন কিছু আমাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রশাসনকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি থাকলে এবং নিয়মিত বাজার মনিটরিং করলে কেনাকাটায় ক্রেতাদের ভেতর ফিরতে পারে স্বস্থির নিঃশ্বাস।