শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা :
সাতক্ষীরা সদরের বাগমারী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কলকাতার খালের গর্ভে। ইতোমধ্যেই সড়কের বড় একটি অংশ খালের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সদর, দেবহাটা ও কালিগঞ্জসহ আশপাশের হাজার হাজার মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত সংস্কার না হলে পুরো সড়কই খালে বিলীন হয়ে যাবে। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। একই সঙ্গে শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিনির্ভর জীবিকায় দেখা দেবে সংকট।
ইতিহাসের খাল এখন ভাঙনের কারণ
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কলকাতার খাল এক সময় এপার বাংলা ও ওপার বাংলার মধ্যে জলপথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল। খালটি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হলেও একে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল দুই বাংলার মাঝে।
খালের দুই পাশে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্মিত সড়ক। ২০২৩ সালে খালটির পুনঃখনন সম্পন্ন হয়। এরপর থেকেই জোয়ার-ভাটার তীব্র স্রোতে খালের পাড় ভেঙে বাগমারী সড়কটির প্রায় অর্ধেক অংশ বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, সামনে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানির প্রবাহে সড়কের অবশিষ্ট অংশও ধসে পড়বে। ফলে শত শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কৃষক ও ব্যবসায়ীর চলাচল ব্যাহত হবে।
কোটি টাকার সড়ক এক বছরেই ভেঙে গেল
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) দেওয়া তথ্যমতে, সাতক্ষীরা সদরের বাগমারী এলাকায় ২০২৩ সালে প্রায় ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১,৭০০ মিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ৪০০ মিটার রাস্তা ইতোমধ্যেই ভেঙে গেছে খালের পানির তোড়ে।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী জানান, রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাজার, মৎস্যঘের ও কৃষি খাতেও এর প্রভাব পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে মৎস্যঘের প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তারা।
সমন্বয়ের অভাবে দুর্যোগ
সাতক্ষীরা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, “সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) ম্যাপ না দেখে চরভরাট জমিতে রাস্তা নির্মাণ করায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। দ্রুত সংস্কার না করলে জনগণের ক্ষতি আরও বাড়বে। ভবিষ্যতে খাল খনন ও রাস্তা নির্মাণে সমন্বয় জরুরি।”
দুই সংস্থার পরস্পর দোষারোপ
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ (পাউবো)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দিন বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল ও নদী খনন করে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে। খননের ফলে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ব্যবস্থা নেবে। ভবিষ্যতে রাস্তা নির্মাণে সমন্বয় করা হবে।”
এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, “খালের পাশে রাস্তা নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আরও ভালো সমন্বয় দরকার ছিল। ভবিষ্যতে এমন ক্ষতি এড়াতে দুই সংস্থার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করা জরুরি।”