সউদ আব্দুল্লাহ
কালাই উপজেলা প্রতিনিধ:
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় অবস্থিত তালোড়া-বাইগুনী চারমাথা হাটটি দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে প্রশাসনিকভাবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় সরকার হারিয়েছে কোটি টাকার রাজস্ব। ২০০১ সালে এই হাট বসানোর জন্য মজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ২০ শতক জমি দান করলেও,পরবর্তী সময়ে সীমানা নির্ধারণ না হওয়ায় হাটটি সরকারিভাবে আজও ইজারাভুক্ত হয়নি। আর এই সুযোগে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে রাজস্ব আদায় করে আসছে।প্রশাসনের নীরবতা,রাজনৈতিক নেতাদের দখলদারিত্ব আর আইনি ফাঁক-ফোকরে তালোড়া-বাইগুনী হাট যেন দীর্ঘদিনের এক ‘উন্মুক্ত লুটপাট এর ক্ষেত্র’ হয়ে উঠেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০১ সালের ২২ জুলাই দানবীর মরহুম মজিবুর রহমান ৪১২৭ নম্বর দলিলের মাধ্যমে হাটের জন্য ২০ শতক জমি দান করেন। তারপর থেকেই প্রতি সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার বসছে নিয়মিত হাট আর দৈনন্দিন বাজার। তবে সমস্যা শুরু হয় সীমানা নিয়ে। হাটটি পুনট ইউনিয়ন ও উদয়পুর ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় প্রশাসন পেরিফেরি নির্ধারণে ব্যর্থ হয়।স্থানীয়রা জানান, এটার সুযোগ নিয়ে এই হাটটি ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল। এরপর ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করেন।এখন বর্তমানে স্থানীয় বিএনপি’র নেতারা আবার হাট দখলে নিয়েছেন। রাজনৈতিক পালাবদল ঘটলেও জনগণের দুর্ভোগ ও সরকারের রাজস্ব বঞ্চনা একই রয়ে গেছে।আর এই সীমানা জটই হয়ে ওঠে প্রশাসনিক অচলাবস্থার মূলকারণ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,বিএনপি’র দুই গ্রুপের মধ্যে স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন ও আরাফাতের নেতৃত্বে এই হাটের উদয়পুর ইউমিয়নের মধ্যে পড়া খাজনা আদায় করছেন এবং অপর গ্রুপের সানাউল্যাহ,আব্দুল মতিন,নূর মোহাম্মদ, আলামিন,তাজউদ্দিন ও হেলালউদ্দিন পুনট ইউনিয়নের মধ্যে পড়া অংশের খাজনা প্রতিদিনই দোকানি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করছেন। তারা সকলেই জানান,আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা এই হাটের খাজনা আদায় করেছেন।এখন আমরা হাটের ও দৈনন্দিন বাজারের খাজনা আদায় করছি নির্ধারিত রেট অনুযায়ী আর মাসিক বেতনভুক্ত কর্মচারীর মতোই কাজ করছেন তারা।হাট থেকে আদায়কৃত কিছু টাকা মসজিদ ও মাদ্রাসাতে দান করা হয়।এতে কোনো অন্যায় দেখছেন না বলে জানান তারা।
ধান ব্যবসায়ী মাসরেকুল রানা জানান,শুধু ধান ব্যবসা থেকেই তার কাছ থেকে এক মাসে ৭৫ হাজার টাকা খাজনা নেওয়া হয়েছে।কাঁচাবাজার,মাছ-মাংস, দুধ ও অন্যান্য স্থায়ী দোকান থেকেও প্রতিদিনই নির্ধারিত রেটে খাজনা আদায় করা হয়।
হাট এলাকার বাসিন্দা হবিবর রহমান বলেন, প্রতিবছর প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত খাজনা আদায় করা হয়,যা সম্পূর্ণভাবে চলে যায় কথিত ইজারাদারদের পকেটে। এর ফলে গত ২২ বছরে সরকার প্রায় এক কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।
হাটের জমিদাতা মজিবুর রহমানের ছেলে মাহবুবুর রহমান বলেন,প্রশাসন জানে এ হাট অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে,তবুও আইনগত পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করছে। যতদিন হাট ইজারাভুক্ত না হবে,ততদিন আমরাই খাজনা আদায় করতে পারতাম। কিন্তু কই, আমরা না করলেও অন্যরা ঠিকই আদায় করে পকেট ভরাচ্ছে।
পল্লী চিকিৎসক আব্দুল জলিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই হাট কবে মুক্ত হবে রাজনৈতিক রাহুর কবল থেকে? কবে নির্ধারণ হবে এর সীমানা এবং কবে পাবে সরকার তার হারানো কোটি টাকার প্রাপ্য রাজস্ব? হাটের সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, হাটটি দুই ইউনিয়নের শেষ সীমানায় হওয়ায়,শুরু থেকেই একটি প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ২৪ বছরে হাটের আয় যাচ্ছে প্রভাবশালীদের পকেটে আর রাষ্ট্র থাকছে খালি হাতে এটা খুবই দুঃখজনক। এটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়,এটি রাষ্ট্রের রাজস্ব আদায়ের উৎস।প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটটির পেরিফেরি নির্ধারণ করে দ্রুত তালিকাভুক্ত করা হবে যাতে আগামী অর্থবছরের মধ্যেই রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়।যারা অবৈধভাবে খাজনা আদায় করছে,তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।