মাগুরা, ৫ মে: মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণকারী ৮ বছরের শিশু আছিয়া খাতুন হত্যা মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সোমবার (৫ মে) ষষ্ঠ দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১টায় ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
এর আগে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামলার চার আসামি হিটু শেখ, তার স্ত্রী জাহেদা বেগম, পুত্রবধূর স্বামী সজীব শেখ এবং সজীবের বড় ভাই রাতুল শেখকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। চারজনই এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে প্রধান আসামি হিটু শেখ সাংবাদিকদের বলেন, “সজীবের স্ত্রী হামিদার সঙ্গে আকাশ নামে এক যুবকের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক ঘিরেই ঘটেছে এই হত্যাকাণ্ড। ওদের ধরলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।” তিনি মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন।
তবে, এই বক্তব্যের সঙ্গে তার আগের স্বীকারোক্তি সাংঘর্ষিক। ১৫ মার্চ ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে হিটু শেখ একাই ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে আদালতে স্বীকার করেন।
সোমবার যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন:
- মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন
- সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায় (যিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করেন)
- গুলশান থানার এসআই আনজু মনোয়ারা
- মাগুরা সদর থানার রেকর্ড অফিসার ওসি আইয়ুব আলী
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, “সোমবার পর্যন্ত মোট ২৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জন সাক্ষী রয়েছেন। মঙ্গলবার ফরেনসিক বিভাগের দুই চিকিৎসকের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।”
ঘটনার পটভূমি:
গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় শিশু আছিয়া খাতুন। পরবর্তীতে তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে সিএমএইচে নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ চার আসামিকেই গ্রেপ্তার করে এবং তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
এই ঘটনার পর দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামে। স্থানীয় আইনজীবীরাও অভিযুক্তদের কোনো ধরনের আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘোষণা দেন।