সিলেট ব্যুরো:- বিএনপি নেতা পরিচয়ে তিনি অবলিলায় চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন কর্মকান্ড। অথচ তিনি ছিলেন খাদিমপাড়া আওয়ামিলীগের একজন দাপুটে নেতা। আরেক ভুমিদুষ্য খাদিমের মামা খন্দকারের সহযোগী ছিলেন তিনি। মামা খন্দকার ও জুবের মিলে গড়ে তুলেছেন সম্পত্তির পাহাড়।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে জুবের দলীয় দাপট খাটিয়ে নানা অপকর্ম করে বানিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গড়েছেন অঢেল সম্পদ। জমি দখল, চাঁদাবাজি, বাড়ি দখল, হামলা, নির্যাতন ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলা হয়ারনীসহ নানা অভিযোগে রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনের ভাগ্নে জুবের আহমদ ধরাকে সরা জ্ঞান করে সিলেটে চালিয়েছিলেন ত্রাসের রাজত্ব। তার বিরুদ্ধে কেউ গেলেই মামলা ও হামলার শিকার হতে হতো।
মামা সরওয়ার হোসেনের তৎকালীন মালিকাধিন সিলেটের আঞ্চলিক পত্রিকা ‘শুভ প্রতিদিন’ এর বাহানা দিয়েও তিনি রাম রাজত্ব কায়েম করতেন। কেউ বাধা দিলে মামার পত্রিকায় পরের দিন সংবাদ প্রকাশ করে বাাধা প্রদানকারি ব্যাক্তিকে সমাজে কুলষিত করতেন।

সুত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মামা কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনও কানাডা পালিয়ে যান। জুবেরও কিছুদিন পলাতক ছিলেন। কিছুদিন পলাতক থাকার পর ফের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকদল নেতাদের সহযোগিতায় চতুর জুবের আহমদ দেশে থেকে তার মামার সবকিছু দেখাশুনা করছেন প্রকাশ্যে।
সুত্র জানায়, এখনো করছেন অন্যের জমি দখল, অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করে করছেন পরিবেশ ধ্বংস। আর তাকে এই কাজে সহযোগিতা করছেন বিএনপির কিছু কতিপয় নেতাকর্মী। ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে।
চাকুরী জীবনে তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন আর সেই পরিচয়ে সবাইকে ভয় দেখিয়ে চলতেন। বর্তমানে তিনি ফের প্রকাশ্যে এসে শুরু করেন পুরনো কর্মকান্ড। এলাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে নিজেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভয় দেখান।
আলোচিত এই আওয়ামী লীগ নেতা ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনের ভাগ্নে জুবের আহমদের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার গল্লাসাংগ গ্রামের শফিক উদ্দিনের ছেলে। বর্তমান জুবের আহমদ খাদিমপাড়া এলাকায় বসবাস করে আসছেন।
তার এলাকা সুত্রে জানা যায়, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে সিলেট শহরে মামা কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন ও যুবলীগ নেতা বাবলা চৌধুরী, সহযোগিতায় জুবের আহমদের দাপটে অতিষ্ট ছিল খাদিমপাড়া এলাকার সাধারন মানুষ। মানুষের জায়গা দখল, চাঁদাবাজি, হামলা, মামলা নির্যাতন চালিয়েছেন জুবের। তাছাড়া তিনি ছিলেন বিএনপি-জামায়াতের আতঙ্ক। মামা কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকার সুবাধে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাকে পাঠানো হত কারাগারে। বাবলা চৌধুরীর নেতৃত্বে তৈরি করেছিলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী।
খাদিম, বাইপাস, শাহপরাণ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার এলাকায় তার নেতৃত্বেই সবকিছু ঘটত। জুলাই অভ্যুত্থানেও ছাত্রদের বিপক্ষে থেকে তার বাহিনী দিয়ে চালিয়েছেন হামলা। কিন্তু এতসব অভিযোগের পরও জুবের আহমদ এখনো বহাল তবিয়তে। এলাকায় বলে বেড়ান তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। এখনো তিনি তার রাম রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন খাদিমপাড়া এলাকায়। তবে জুবের এখন তার কৌশল পাল্টিয়েছেন। বিএনপির কিছু নেতা তাকে সহযোগিতা করছেন। তবে জুবেরের এমন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোতে ক্ষুব্ধ বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে সিলেট সরকারী কলেজ ছাত্রদল নেতা মারুফ আহমদ জানান, ৫ আগস্টের আগে জুবের তার কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন ও যুবলীগ নেতা বাবলা চৌধুরীর দাপট দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা, মামলা দিয়ে নির্যাতন করছেন। আর এখন আমাদের কিছু কতিপয় নেতা তাদের সহযোগিতা করছেন। এটা জুলাই আন্দোলনের শহিদদের রক্তের সাথে বেইমানী।
নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা কাহের আহমদ জানান, জুবের খাদিমপাড়া এলাকায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালীন দাপটের সাথে চলেছেন এখনো চলছেন। সারোওয়ার ও বাবলা চৌধুরীর মাধ্যমে জায়গা দখল, চাঁদাবাজি, মাটে কেটে বিক্রি করেছেন। এখনো স্বেচ্ছাসেবক দলের কতিপয় কিছু নেতার সহযোগিতায় সে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা অতিদ্রুত তাকে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগর চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে শাহপরাণ (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, আমরা অভিযান চালাচ্ছি। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।