সউদ আব্দুল্লাহ ,কালাই(জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:
দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে একদিন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন রিতা আক্তার। জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার পুনুট ইউনিয়নের তালখুর গ্রামের মেয়ে,পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন জীবনের লক্ষ্যপানে। বিজ্ঞান বিভাগে মেধাবী ছাত্রী রিতা,স্থানীয় ভূগোইল হেজবুল্লাহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভর্তি হন ঢাকার মিরপুরের দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজে।
কিন্তু, সেই স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই অকালে ঝরে যেতে হলো তাকে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-২ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে তার মাথা ক্ষতবিক্ষত হয়। সহপাঠীরা দ্রুত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রিতা।
তার এই অকাল মৃত্যু গোটা দেশকে নাড়া দিয়েছিল। পরিবারের স্বপ্নের বাতি নিভে গেলেও, তার আত্মত্যাগ অনেক তরুণের চোখ খুলে দিয়েছে। বাবা আশরাফ আলী, মা রেহেনা বিবি এবং ছোট ভাই রোকন ইসলামের জীবনে নেমে আসে গভীর অন্ধকার। তাদের আর্থিক সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
এই দুঃসময়ে শহীদ রিতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন কালাই উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার (২৮ মার্চ) বিকালে ঈদ উপলক্ষে রিতার পরিবারের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান। এই সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি তামিম ইসলাম।
উপহার হাতে পেয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি রিতার মা রেহেনা বিবি। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। ওর জায়গাটা আর কেউ পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু এই ঈদ উপহার পেয়ে মনে হচ্ছে, অন্তত কেউ আমাদের কথা ভাবছে,পাশে দাঁড়াচ্ছে।”
এর আগেও,২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর,কালাই পৌরসভার পক্ষ থেকে রিতার পরিবারকে ৪০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও কালাই পৌরসভার প্রশাসক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর নিজ হাতে এই সহায়তা তুলে দেন।
রিতার বাবা আশরাফ আলী বলেন,আমার মেয়ে সবার জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। আমি চাই,ওর স্বপ্ন যেন নষ্ট না হয়।আমার ছোট ছেলে রোকনকে ভালোভাবে পড়াশোনা করিয়ে রিতার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।