শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী সংবাদদাতা
ডাকাত এবং চালকের লড়াইয়ে ৪০জন বাস যাত্রীর সংকটাপন্ন জীবন বাঁচিয়ে প্রশংসায় ভাসসেন নোয়াখালীর বীর ‘বাসচালক’ মো.সোহেল (৩৮)। বর্তমানে গুরুত্বর আহত অবস্থায় তিনি ২৫০শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে রবিবার (৬ এপ্রিল) গাড়ির মালিক বাদী হয়ে নোয়াখালী সুধারাম মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এর আগে, গেল সোমবার মধ্যরাতে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। হামলায় বাসচালক সোহেলের চোয়াল থেঁতলে গেছে। মাথা ও চোয়ালে লেগেছে ৩১টি সেলাই। ভেঙে গেছে নিচের পাটির দুটি দাঁত।
আহত বাস চালক সোহেল নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের গোলাম রহমানের বাড়ির শফিবুল ইসলামের ছেলে।
রবিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে কথা হয় চালক সোহেলের সাথে। তিনি জানান, গত ১৫ বছর ধরে বাস চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। গত সোমবার দিবাগত রাতে একুশে পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ৪০জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে নোয়াখালী আসছিলেন তিনি। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পার হলে ১২ থেকে ১৩টি নম্বর বিহীন মোটরসাইকেলে করে একদল তরুণ বাসটি অনুসরণ শুরু করেন। এরপর প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ বাসটিকে ধাওয়া করেন তাঁরা। একপর্যায়ে কুমিল্লার লাকসাম এলাকায় বাসটি থামানোর জন্য দুই দফায় চালককে লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়তে থাকে তাঁরা। এতে গাড়ির গ্লাস ছেদ করে ইটের আঘাতে চালক গুরুতর আহত হন। এরপরও যাত্রীদের বাঁচাতে রক্তাক্ত গুরুত্বর আহত অবস্থায় বাস চালিয়ে যান তিনি। এতে প্রাণে বাঁচেন যাত্রীরা।
সোহেল আরো বলেন, দুই দফায় আমার শরীরে ইটের আঘাত লাগে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাস চালাতে থাকি। যদি তারা বাস থামাতে পারতো তাহলে আমাকে প্রাণেই মেরে ফেলত। এরপর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সকল বাধা উপেক্ষা করে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে বাসটি নোয়াখালী সুধারাম থানার সামনে নিয়ে যাই। পরে যাত্রীরা নেমে থানায় ঢুকে পড়ে।
জানা যায়, ঘটনার পরপরই বাসের মালিক সুধারাম মডেল থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করতে চান। কিন্তু সুধারাম মডেল থানা থেকে সোনাইমুড়ী থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সোনাইমুড়ী থানা থেকে আবার লাকসাম থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এদিকে পুলিশ বলছে, মোটরসাইকেলকে পাশ না দেওয়ায় ওই তরুণেরা বাসটির চালকের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে জেনেছে তারা।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, সোহেলের মাথা ও চোয়ালে ৩১টি সেলাই লেগেছে। ভেঙে গেছে নিচের পাটির দুটি দাঁত। তবে তাঁর অবস্থা এখন উন্নতির দিকে।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, এ বিষয়ে গাড়ির মালিক বাদী হয়ে সুধারাম মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেছেন। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। অগ্রগতি হলে আপনাদের জানানো হবে।