অমৃত জ্যোতি(মধ্যনগর)সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী একাধিক বাদ্যে পারদর্শী বাউল রিপন রাজ ভালো নেই।দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে।ঘরে শুইলে সঙ্গী হয় চাঁদ আর তারা। বলছি উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নওয়াগাঁও গ্রামের নগেন্দ্র রাজ ও বাঞ্চা রানী দম্পতির দ্বিতীয় পুত্র রিপন রাজ(৩৫)র কথা।তিনির জন্ম থেকেই দুটি চোখে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।বাল্যকালে বাবার হাতে ধরে মধ্যনগর বাজারে আসতেন।এবং রেডিও, টেপ রেকর্ডার থেকে শুনেশুনে গান মুখস্থ্য করে ডুগডুগি ও খম্মক বাজিয়ে হাট বাজারে বাউল সহ বিভিন্ন ধরনের গান গাইতেন।সঙ্গী হিসেবে তার বাবা দেশীয় বাজনায় করতেন সহযোগিতা।এক পর্যায় কিছু টাকা সংগ্রহ করে একটি বেহালা কিনেন এবং মাধ্যনগরে পালপাড়ার গ্রামের বাউল দিগেন্দ্র পালের থেকে বেহালার হাতে কড়ি গ্রহন করেন।ক্রমন্বয়ে একটি ইলেকট্রিক হারমোনিয়াম(কেসিও)র বাজনা হাত করেন।পাশাপাশি ড্রাম সেট বাজিয়ে গ্রামীন বিবাহের গান বাজনা ও যাত্রাপালার গানে খঙ্গের মিষ্টি সুরে গান গেয়ে চলতো জীবন।কিন্তু এখন এসব বিলুপ্তির পথে যার দরুন থেমে গেছে রিপনের আয়ের উৎস।তবে যখন আর চলেনা সংসার,তখনি জীবিকার তাগিদে বেড়িয়ে পড়েন বেহালা নিয়ে।
সামান্য কিছু অর্থ উপর্জন করে বাবার ভিটায় তৈরী করেন একটি গ্রামীণ কুটির।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও মিষ্টি গানের সুরে স্বাচ্ছন্দ্যে উপজেলার পাশ্ববর্তী রামদীঘা করেন শ্বশুর বাড়ী।শুরু হয় পারিবারিক জীবন।দম্পতির কোলে জুড়ে আসে ফুটফুটে পুত্র সন্তানগণ।একপর্যায়ে বিধাতার ডাকে সাড়া দিয়ে পরলোকগমন করে একপুত্র।বর্তমান একপুত্রের জনক রিপন রাজ।ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ১৪৩০বাংলার শেষ দিকে আকস্মিক অগ্নিকান্ডে ধ্বংস হয় সেইছোট্ট কুঠিরটিও।এরপরথেকে হন্নহয়ে মাঠে-ময়দানে ঘুড়ে বেড়ান বাউল রিপন।তার বাবা,মা,স্ত্রী,পুত্রের ভালবাসাময় স্বপ্নে আবারো বাঁশ খুটির ঘরবাঁধায় মেতে উঠেন তিনি।কিন্তু দুঃখের বিষয় বাঁশ দিয়ে ঘরের খাঁচা বা ফ্রেম তৈরী করলেও চালায় দিতে পারেননি টিন।কয়েক পাতা ঢেউটিন হওলাদ করে চালা তুললেও ঘরের ভিতরে একাংশ ও বারান্দার উপর রয়েছে ফাঁকা।
রাতের আকাশে চাঁদ তারা যেন তার নিত্যরাতের সঙ্গী সাথী।ঘরের বেড়া বা বেষ্টনীর দিয়েছেন ত্রিপাল দিয়ে তাও সেটি আবার অন্যের।কিন্তু বর্তমান ঝড় বাদল আর কাল বৈশাখের থাবায় ছিড়ে নেয় প্রতিনিয়তই ত্রিপালগুলো।বৃষ্টির পানিতে ভেসে যায় ঘরের ভিটে সহ বিছনা ও বালিশ।দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় অন্যের সাহায্যে করান মেরামত।সময়ের পরিবর্তনে গান বাজনার সরঞ্জাম গুলো ঘড়েই ঝুলে রয়েছে।ভিজেযায় সামান্য বৃষ্টিতে বাদ্যযন্ত্রগুলো।প্রতিবেশী ও স্ত্রী ববিতা রাজের সাথে কথা বলে জানা যায় গানের কোন বায়না নাথাকায় খেয়ে না খেয়েই দিন কাটছে বাউল রিপনের।মা বাঞ্চা রানী কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,গত রোববার ঘরে কিছুই নাই।পরে বেহালা নিয়া বাজারে গেছে কয়েকটা গান গাইয়া কিছু টাকা জোগাড়র করিয়া চাল,ডাল,তেল আনার পরে ঘরে রান্না হইছে।এখন ঝড় বাদলের দিন আইছে, ঘরে থাকতো পারে না।আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবী জানাই আমার ছেলে রিপনকে ঘরটা যদি বানাইয়া দিতেন।তাইলে উপকার হইতো।নাইলে তার জীবনে আর ঘর বানানি সম্ভব’না।
বাউল রিপন রাজ বলেন প্রতিযোগীতার আসরে প্রায় সময়েই ডাক পড়ে গান গাওয়ার জন্যে।কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জে বাউল অন্বেষণ প্রতিযোগীতা২০২৫ এর চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়েও বাদ পড়ে যাই।উত্তীর্ণ হতে পারলে হয়তো কিছু দিন চলার ব্যাবস্থা হতো।বিধাতা দুটি চোখে দৃষ্টি না’দিলেও জীবনে স্বপ্ন তো’ছিল অনেক।বর্ষায় বিয়েতে গান বাজনা করে সামান্য আয় দিয়ে কিছুই করতে পারিনা।নুন আন্তে পান্তা নাই।শুকনোর মৌসুমেত এক্কেবারে বসেই থাকি।বেহালা নিয়ে বের হলে যদি কিছু মিলে খাই।নাইলে বৌ বাচ্চা নিয়ে অনাহারে দিন কাটাই।আমার জীবনে ঘর বাঁধা কখনোই সম্ভব নয়।সরকারের গৃহায়ণ প্রকল্পের আওতায় কেন জানি আমি পরিনি।বর্তমান সরকার ও উপজেলা প্রশাসন যদি আমার দিকে তাকান হয়তো দূর্যোগপূর্ণ দিনে একটু স্বস্তিতে মাথা গুজাতে পারবো। মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায় দৈনিক আমার সংবাদকে বাউল রিপন রাজের সাথে কথা হয়েছে।উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢেউটিন ও নগদ অর্থের ব্যাবস্থা করা হবে।